নোটিশ

শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১২

কারবালার হৃদয় বিদারক ইতিহাস (৯)


হযরত হুর বিন ইয়াযীদ রিয়াহী আলাইহিস সালাম-এর শাহাদাত

হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার আপন জনের মধ্যে ভাই ছিল, ভ্রাতুষ্পুত্র ছিল, ভাগিনা ছিল এবং ছেলে ছিল। তিনি কাউকে কিছু না বলে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে ইয়াযীদের সৈন্যদের সামনে গেলেন এবং বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে আহলে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাহায্যকারী কেউ আছো কি? এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাহায্যকারী কেউ আছো কি? আহলে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাহায্য করে বেহেশতে গমনের ইচ্ছুক কেউ আছো কি? উনার এ আহবানে ইয়াযীদী বাহিনীর হুর বিন ইয়াযীদ রিয়াহীর অন্তরে বিপ্লব শুরু হয়ে গেল।
সে ঘোড়ার উপর অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো। তার এই অবস্থা দেখে তার এক সঙ্গী জিজ্ঞাসা করলো- হুর! কি হল? তোমার এই অবস্থা কেন? তোমাকে বড়ই ব্যতিব্যস্ত দেখাচ্ছে? আমি তোমাকে অনেক বড় বড় যুদ্ধ ময়দানে দেখেছি। কিন্তু কোন সময় তোমাকে আমি এ রকম অস্বাভাবিক অবস্থায় দেখিনি। কিন্তু এখন তোমার এই অবস্থা কেন? হুর বলল, কি বলবো, আমি আমার একদিকে বেহেশ্্ত দেখছি আর এক দিকে দোযখ। মাঝখানে অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছি এবং কি করব তা চিন্তা করছি। একদিক আমাকে দোযখের দিকে টানছে আর একদিক বেহেশ্তের দিকে আহবান করছে। এটা বলার পর পরই তিনি ঘোড়াকে চাবুক মেরে এক নিমিষে ইয়াযীদী বাহিনী থেকে এ বলে বের হয়ে আসলেন, ‘যেতে হলে বেহেশ্তেই যাব।ইয়াযীদী বাহিনী থেকে বের হয়ে হুর জোর গলায় বললেন, দেখ, জাহান্নাম থেকে আল্লাহওয়ালা বের হচ্ছে।
আসলে একজন বের হয়ে আসার দ্বারা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার বাহিনীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হল না। আর ইয়াযীদী বাহিনীরও হাজারের মধ্যে একজন চলে গেলে কিছু আসে যায় না। তবে আসল কথা হলো, হুর ছিল বেহেশ্তী কিন্তু অবস্থান করছিল দোযখীদের সাথে।

হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার আধ্যাত্মিক দূরদৃষ্টি দ্বারা অবলোকন করলেন যে, জান্নাতী দোযখীদের মধ্যে অবস্থান করছে। তাই তিনি ডাক দিলেন, উনার মুবারক ডাকে সাড়া দিয়ে হুর ইয়াযীদী বাহিনী থেকে বের হয়ে সোজা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সামনে আসলেন এবং বলতে লাগলেন, ওগো রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদ! আপনি যে ডাক দিয়েছেন, ‘এ নাজুক সময়ে আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাহায্য করে বেহেশ্তে যাওয়ার মত কেউ আছে কিনাআমি সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ইয়াযীদ বাহিনী থেকে বের হয়ে এসেছি। তাই আমি যদি আজ আপনার সাহায্যার্থে জান কুরবান করি, তাহলে সত্যিই কি আপনার নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত নসীব হবে? উনি বললেন, ইনশাআল্লাহ হবে। হুর বললেন, আপনি আমার জন্য দুয়া করুন, আল্লাহ তায়ালা যেন আমার বিগত দিনের পাপ মাফ করে দেন এবং আমার গড়িমসিকে ক্ষমা করে দেন। আমি আপনার পক্ষে জান কুরবান করার জন্য যাচ্ছি। এ বলে হুর কোমর থেকে তলোয়ার বের করে ইয়াযীদী বাহিনীর সামনে গেলেন। হুরকে দেখে ইয়াযীদী বাহিনীর সেনাপতি আমর বিন সাদ সৈন্যদেরকে বললো, দেখ, হুর ছিল আমাদের বাহিনীর সেনাপ্রধান। সে এখন আমাদের শত্রুদের হাতে হাত মিলিয়েছে। সে আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তোমরা তাকে এমন শিক্ষা দাও, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে শিক্ষণীয় হয়ে থাকে। এরপর ইয়াযীদী বাহিনী চারিদিক থেকে আক্রমণ শুরু করলো। হযরত হুর রহমতুল্লাহি আলাইহিও এমন জোরে আক্রমণ শুরু করে দিলেন যে, ইয়াযীদী বাহিনীর জন্য যেন খোদার গযব নাযিল হলো। শেষ পর্যন্ত তিনি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন।





চাচাতো ভাই এবং সৎভাই-এর শাহাদাত

হযরত হুর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শাহাদাতের পর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সামনে হযরত আকিল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বংশধর হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ভাই হযরত আব্দুল্লাহ বিন আকিল রহমতুল্লাহি আলাইহি দাঁড়িয়েছিলেন এবং অনুমতি প্রার্থনা করছিলেন। হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকেও বুক মুবারকে জড়িয়ে ধরলেন এবং কপালে চুম্বন করে অনুমতি দিলেন। তিনিও যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে নিজের বীরত্ব প্রদর্শন করে ইয়াযীদী বাহিনীর অনেককে হত্যা করে পরিশেষে শাহাদাত বরণ করলেন।

এবার হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার ভাই হযরত আবু বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি অনুমতি নিয়ে যুদ্ধের ময়দানের দিকে অগ্রসর হলেন। শেরে খোদা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আওলাদ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রমাণ করলেন, উনাদের বাহুতে শেরে খোদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শক্তি রয়েছে।

জিহাদের ময়দানে উনারা যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন, তা কারবালার মাটিতে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। উনিও অনেক ইয়াযীদী সৈন্যকে খতম করে শেষ পর্যন্ত নিজে শাহাদাত বরণ করেন।