নোটিশ

শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

১২ রবিউল আউয়াল শরীফই হলো হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের সঠিক তারিখ

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর তারিখ নিয়ে অনেক বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও কাফির মুশরিকরা মতানৈক্য করে থাকে। অথচ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর তারিখ রয়েছে।
আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
يا ايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم فان تنازعتم فى شىء فردوه الى الله والرسول .
অর্থ: “হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ পাক- উনার ইতায়াত করো এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার ইতায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমরউনাদের ইতায়াত করো।

অতঃপর যখন কোন বিষয়ে উলিল আমরগণ উনাদের মাঝে ইখতিলাফ দেখতে পাবে, তখন (সে বিষয়টি ফায়সালার জন্য) তোমরা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করো, অর্র্থাৎ যে উলিল-আমরের কুরআন-সুন্নাহর দলীল বেশি হবে- উনারটিই গ্রহণ করো।” সুবহানাল্লাহ!(সূরা নিসা : আয়াত শরীফ- ৫৯)
প্রকাশ থাকে যে, ইখতিলাফ বা মতভেদ দু’রকমের হয়ে থাকে।
(১) শুধু হক্বের জন্য হক্ব তালাশীগণের ইখতিলাফ। যেমন- ঈমানের শর্ত হিসেবে কেউ উল্লেখ করেছেন-
التصديق بالجنان والاقرار باللسان .
অর্থ:
 “অন্তরে বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি।
আবার কেউ উল্লিখিত দুটি শর্তের সাথে তৃতীয় শর্ত হিসেবে-
والعمل بالاركان .
অর্থ: 
“ফরযসমূহ আমল করা”- উল্লেখ করেছেন।
অনুরূপ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি বিষয় বা আমলের ক্ষেত্রে মাসয়ালা-মাসায়িল, হুকুম-আহকাম বর্ণনার ব্যাপারে ইখতিলাফ পরিলক্ষিত হয়
এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
اختلاف العلماء رحمة .
অর্থ: 
“হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ উনাদের ইখতিলাফ রহমতের কারণ।
যেমন, হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ উনারা ইখতিলাফ করে হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী, হাম্বলী- ৪টি মাযহাবকেই হক্ব বলে স্বীকার করে নিয়েছেন এবং এর উপরই উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় যদি পালন করা ঠিক না হয় তাহলে কি আল্লাহ পাক, আল্লাহ পাক উনার হাবীব, ঈমান, ইসলাম সব বাদ দিতে হবে? কস্মিনকালেও নয়। বরং আল্লাহ পাক তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেখানে মতভেদ হবে সেখানে যে উলিল আমরের স্বপক্ষে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর দলীল বেশি হবে, উনারটিই গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি বলবে মতভেদপূর্ণ বিষয় পালন করা ঠিক নয়, সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে মুরতাদ ও কাফিরের অন্তর্ভুক্ত। আর কোন বিষয়ে যখন একাধিক মত থাকবে, তখন যে মতটি অত্যধিক ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবে, তা আমল করতে হবে। মতভেদ আছে বলে মূল বিষয়টির আমলই ছেড়ে দিতে হবে- এ বক্তব্য চরম শ্রেণীর জাহিলদের উক্তি বৈ কিছুই নয়। এ বক্তব্যও কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর সম্পূর্ণ বিপরীত ও কুফরীর শামিল।
স্মরণীয় যে, ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিন। এটাই সবচেয়ে ছহীহ ও মশহূর মত।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাফিয হযরত আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন-
عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس رضى الله تعالى عنهما قالا ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول .
অর্থ: 
“হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ‘হস্তী বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এর সোমবার শরীফ হয়েছিল।”(বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
উক্ত হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ উনারা বলেছেন, “তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।(খুলাছাতুত তাহযীব)
“দ্বিতীয় বর্ণনাকারী হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনিও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।”(খুলাছাহ,তাক্বরীব)
আর তৃতীয় হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এ দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবী উনাদের বিশুদ্ধ সনদ সহকারে বর্ণিত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, “১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর দিবস।” এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপরই ইমামগণের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।(সীরাত-ই-হালবিয়াহ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব, মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ইত্যাদি)
এই ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার পবিত্র দিনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত-এর প্রকাশ করা হয়েছে এবং এই পবিত্র দিনেই তিনি হিজরত শরীফ করেছেন এবং তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবিক ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর মুবারক দিবস। এটাই ছহীহ ও মশহূর মত। এর বিপরীতে যেসব মত ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে তা অনুমান ভিত্তিক ও দুর্বল। অতএব, তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর সঠিক তারিখ ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সম্পর্কে যারা চু-চেরা করে থাকে তারা দু’দিক থেকে কাফির।
প্রথমত, তারা হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনা অস্বীকার করার কারণে কাফির।
দ্বিতীয়ত, কালামুল্লাহ শরীফ-এ বর্ণিত ‘নাসী’কে স্বীকার করে নেয়ার কারণে তারা কাফির। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
انما النسىء زيادة فى الكفر يضل به الذين كفروا يحلونه عاما ويحرمونه عاما ليواطؤوا عدة ما حرم الله فيحلوا ما حرم الله .
অর্থ: 
“নিশ্চয়ই নাসী তথা মাসকে আগে-পিছে করা কুফরীকে বৃদ্ধি করে থাকে। এর দ্বারা কাফিরেরা গুমরাহীতে নিপতিত হয়। তারা (ছফর মাসকে) এক বছর হালাল করে নেয় এবং আরেক বছর হারাম করে নেয়, যাতে আল্লাহ পাক উনার হারামকৃত মাসগুলোর গণনা পূর্ণ করতে পারে।”(সূরা তওবা, আয়াত শরীফ/৩৭)
অর্থাৎ, জাহিলিয়াতের যুগে কাফির, মুশরিকরা ছফর মাসকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করতো। তাই তারা নিজেদের খেয়াল-খুশি মুতাবিক এ মাসটিকে আগে-পিছে করতো। আরেকটি কারণ হলো, যখন তারা যুদ্ধ-বিগ্রহ করার প্রয়োজন মনে করতো বা যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো, তখন তারা ছফর মাসকে আগে পিছে করে হারাম মাসের সংখ্যা নিরূপণ করতো, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী।(তাফসীরে দুররে মানছূর)
এছাড়াও কাফির, মুশরিকরা তাদের নিজেদের স্বার্থে দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্য বছরকে বারো মাসে গণনা না করে কোনো কোনো বছর দশ মাস থেকে সতের মাস পর্যন্ত গণনা করতো, যা নাসী হিসেবে মশহুর। এর কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ-এর তারিখ ও দিন কস্মিনকালেও মিলানো সম্ভব নয়। কারণ বিলাদত শরীফ থেকে বিদায় হজ্জ পর্যন্ত প্রায় তেষট্টি (৬৩) বছর। এই তেষট্টি বছর যাবৎ কাফির, মুশরিকরা নাসী করেছে। আর এই জন্যই বিদায় হজ্জের সময় খুতবায় নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাস, তারিখ, দিন, স্থান সমস্ত কিছু নতুন করে ফায়ছালা করেছেন, যা বিদায় হজ্জের খুতবায় বর্ণিত রয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى بكرة رضى الله تعالى عنه قال خطبنا النبى صلى الله عليه وسلم يوم النحر قال ان الزمان قد استدار كهيئته يوم خلق الله السموات والارض السنة انثى عشر شهرا منها اربعة حرم ثلث متواليات ذو القعدة وذوالحجة والمحرم ورجب مضر الذى بين جمادى وشعبان وقال اى شهر هذا قلنا الله ورسوله اعلم فسكت حتى ظننا انه سيسميه بغير اسمه قال اليس ذا الحجة قلنا بلى قال اى بلد هذا قلنا الله ورسوله اعلم فسكت حتى ظننا انه سيسميه بغير اسمه قال اليس البلدة قلنا بلى قال فاى يوم هذا قلنا الله ورسوله اعلم فسكت حتى ظننا انه سيسميه بغير اسمه قال اليس يوم النحر قلنا بلى قال فان دماءكم واموالكم واعراضكم عليكم حرام كحرمة يومكم هذا فى بلدكم هذا فى شهركم هذا وستلقون ربكم فيسئلكم عن اعمالكم الا فلا ترجعوا بعدى ضلالا يضرب بعضكم رقاب بعض الا هل بلغت قالوا نعم قال اللهم اشهد فليبلغ الشاهد الغائب فرب مبلغ اوعى من سامع .

অর্থ: 
“হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরবানীর দিনে (দশই যিলহজ্জ) আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করলেন এবং বললেন, বছর ঘুরে এসেছে তার গঠন অনুযায়ী, যেদিন আল্লাহ তায়ালা তিনি আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন। বছর বার মাসে। তার মধ্যে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত। তিনটি পর পর এক সাথে- যিলক্বদ, যিলহজ্জ ও মুহররম এবং চতুর্থ মাস মুদ্বার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শা’বানের মধ্যখানে অবস্থিত। অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এটি কোন মাস? আমরা বললাম, “আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।” অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন, যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, “এটি কি যিলহজ্জ নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!” অতঃপর তিনি বললেন, “এটি কোন শহর?” আমরা বললাম, “আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।” অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, “এটি কি পবিত্র মক্কা শহর নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!” অতঃপর তিনি বললেন, “এটি কোন দিন?” আমরা বললাম, “আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।” অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন, যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, “এটি কি কুরবানীর দিন নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” তখন তিনি বললেন, “তোমাদের জীবন, সম্পদ ও সম্মান তোমাদের জন্য পবিত্র, যেমন তোমাদের এই মাস, এই শহর ও এই দিন পবিত্র। তোমরা শীঘ্রই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট পৌঁছবে আর তিনি তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। সাবধান! আমার পর তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে একে অন্যের জীবননাশ করো না। আমি কি তোমাদেরকে (মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বিধান) পৌঁছাইনি? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ পাক! আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি যেনো অনুপস্থিত ব্যক্তিকে এটা পৌঁছিয়ে দেয়। কেননা, অনেক এমন ব্যক্তি যাকে পরে পৌঁছানো হয়, সে আসল শ্রোতা অপেক্ষা অধিক উপলব্ধিকারী ও হিফাযতকারী।(বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
অতএব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ-এর সঠিক তারিখ ১২ রবীউল আউয়াল শরীফ ব্যতীত অন্য যেসব তারিখ ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে, তা কাফিরদের নাসী তথা মাস, দিন, তারিখ পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বর্ণিত রয়েছে। ফলে তা মানা বা গ্রহণ করা বা স্বীকার করা প্রত্যেকটিই কুফরীর সামিল। বিশিষ্ট তাফসীরকারক হযরত ইবনে কাছির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও বলেছেন, ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার এটাই প্রসিদ্ধ ও মাশহুর ও গ্রহণযোগ্য মত।(বেদায়া-নেহায়া ২য় খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা)
আরো হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম তথা পবিত্র সোমবার শরীফ সুবহে ছাদিকের সময় বিলাদত শরীফ লাভ করেন।”(খছায়িছুল কুবরা)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর সময়টি ছিলো রাত্রিও না দিনও না। বরং উভয়ের মাঝামাঝি। কারণ রাত্রি চেয়েছিলো যাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন তার মধ্যে হয় অনুরূপ দিনও চেয়েছিলো যেনো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন দিনে হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি উভয়ের আরজি পূরণ করলেন এবং রাত্রি ও দিনের মাঝ সময় অর্থাৎ সুবহে ছাদিকের সময় আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর অনুষ্ঠান হয়। উনার মুবারক তাশরীফে সারা আলম আলোকিত হয়।
সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘নূরে মুহম্মদী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ উল্লেখ রয়েছে,
اعلموا ان الجمهور من اهل السير و التواريخ اتفقوا على ان تولده صلى الله عليه و سلم- كان فى عام الفيل بعد اربعين يوما من واقعته اوخمس و خمسين يوما- و هذا القول اصح الاقوال رواية و نقلا- و كان ذلك ليلة الثانى عشر يوم الاثنين من الربيع الاول- على ماهو اشهر و اكثر سماعا- و على هذا عمل اهل مكة في زيارتهم موضع ولادته الشريعة ندبا- و قراءة المولد و الاتيان بادابه و اوضاعه كان فى هذه الليلة بينهم اكثر عملا-
অর্থ: স্মরণ রাখতে হবে যে, সমস্ত ইমাম মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম সীরাত গ্রন্থাকার ও ঐতিহাসিকগণ উনারা এই কথার উপর একমত যে, হাতিওয়ালা বা আবরাহ ও তার দলবল ধ্বংস হওয়ার চল্লিশ দিন অথবা পঞ্চান্ন দিন পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ আনেন। এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত। আর সেই রাত্রি মুবারক ছিলো ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শরীফ সুবহে ছাদিকের সময়। আর এই মতটিই সুপ্রসিদ্ধ ও জনশ্রুতি অত্যধিক। উপরন্তু এই মুবারক তারিখ মক্কাবাসী উনাদের নিকট বিশেষ প্রচলিত। উনারা উক্ত ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর স্থান মুবারক যিয়ারত করতেন এবং সেই রাত্রি মুবারক-এ মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করা ও এটার আদব রক্ষা করা উনাদের নিকট একটি সর্বোত্তম প্রিয় ও অত্যধিক সুপ্রচলিত আমল ছিলো। সুবহানাল্লাহ!