নোটিশ

বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ, ২০১২

অহঙ্কারবশতঃ যারা গুমরাহীর উপর দৃঢ় থাকবে তারা হিদায়েত পাবে না


অহঙ্কারবশতঃ যারা গুমরাহীর উপর দৃঢ় থাকবে তারা হিদায়েত পাবে না
যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে যম, আওলাদুর রসূল, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী এক ক্বওল শরীফে কথা বলেন

মুজাদ্দিদে আযম, হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, অন্তরের একটি রোগ হলো তাকাব্বুর, গুরুর বা গর্ব-অহঙ্কার
আর অহঙ্কারীর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে গর্ব-অহঙ্কার করে বেড়ায়, তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শনাবলী হতে শীঘ্রই ফিরিয়ে দিব, ফলে তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও ওতে বিশ্বাস করবে না তারা সৎ পথ দেখলেও ওকে পথ বলে গ্রহণ করবে না কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে সেই পথ ধরবে এটা কারণে যে, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা উদাসীন ছিল যারা আমার নিদর্শনসমূহ পরকালের সাক্ষাতকে মিথ্যা বলে, তাদের কার্য নিষ্ফল হয়েছে তারা যা করছে তদানুযায়ী তাদের প্রতিফল দেয়া হবে (সূরা রাফ/১৪৬, ১৪৭)

মুজাদ্দিদে আযম, হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আল্লাহ পাক-এর কুদরতী নিয়ম হলো, আসমানী নিয়ামত দ্বারা উপকার হাছিল করতে প্রয়োজন আযীযী, ইনকিসারী, তাওয়াদ্বু বা বিনয়-নম্রতা কিন্তু অহঙ্কার নামক ধ্বংসাত্মক বিষনম্রতাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয় তখন আসমানী নিয়ামতের ধারক বাহক নবী রসূল আলাইহিমুস্সালামগণের ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ ধারণ করতে অক্ষম হয়েই আসমানী নিয়ামত-এর হাক্বীক্বী স্বাদ উপলব্ধি করা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়

মুজাদ্দিদে আযম হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, যারা পৃথিবীতে নাহক্ব বা অন্যায়ভাবে দম্ভ-অহঙ্কার করে বেড়ায় অর্থাৎ ক্ষুদ্র হওয়া সত্ত্বেও নিজের বড়ত্ব জাহির করে, আল্লাহ পাক তাদেরকে হক্ব বা সত্য থেকে চির বঞ্চিত করে রাখবেন কেননা, তারা না হক্বকেই হক্ব মনে করে নিয়েছে হাদীছে কুদসী শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,আমি আমার বান্দার ধারণার অনুরূপ আর আল্লাহ পাক কালামে পাকে প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন,যখন তারা বক্র হলো, আল্লাহ পাকও বক্র করে দিলেন তাদের অন্তরগুলোকে অর্থাৎ তারা বক্র হওয়ার কারণেই তাদের অন্তরগুলো বক্র হয়ে গেল (সূরা ছফ/)

মুজাদ্দিদে আযম হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, তাকাব্বুর বা অহঙ্কার তিন প্রকার হতে পারে যেমন-এক নম্বর হলো: আল্লাহ পাক রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধে তাকাব্বুর, যা সরাসরি কুফরী; দুই নম্বর হলো: মুসলমানগণের বিরুদ্ধে তাকাব্বুর, যা হারাম দুপ্রকার তাকাব্বুর নাহক্ব বা অন্যায় আর তিন নম্বর হলো: কাফিরদের বিরুদ্ধে তাকাব্বুর, যা বিশেষতঃ জিহাদের ক্ষেত্রে ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত প্রকার তাকাব্বুর হক্ব বা সঠিক, সত্য

মুজাদ্দিদে আযম হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, তাকাব্বুর এমন এক আভ্যন্তরীণ ব্যাধি যার প্রভাবে অন্তরের চোখ, কান সবই বেকার হয়ে যায় তাই কিতাবে বলা হয়েছে, যখন ইলম অন্তরে স্থান না পেয়ে দেহের উপর ক্রিয়া করে, তখন তা আরও বিপজ্জনক হয় আর বিপজ্জনক পরিণতি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে আহলুল্লাহগণের তথা হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহগণের বিরোধিতা করার কারণে

মুজাদ্দিদে আযম হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, প্রত্যেক যুগের নাহক্ব, অহঙ্কারী, হারামের পক্ষে ইজতিহাদকারী, মুনাফিক উলামায়ে ছূ গোষ্ঠী আহলুল্লাহগণের বিরোধিতা করার কারণে তথা হক্বকে নাহক্ব মনে করার কারণে তাদের হারাম-হালালের জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও অনেক হারাম কাজকে হিকমতের অজুহাতে নির্লজ্জভাবে অনুশীলনে বাধ্য হয় ফলে উলামায়েছূ দল সরাসরি জলজ্যান্তভাবে- “কুরআন শরীফ হাদীছ শরীফ না মানার, না বুঝার কিংবা অপব্যাখ্যা করার কারণে পথভ্রষ্ট হয়

মুজাদ্দিদে আযম হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, ওহীর মমার্থ রহস্যের সন্ধান আহলুল্লাহগণের অন্তর দৃষ্টির ছত্রছায়ায় অবগাহন ব্যতীত কস্মিনকালেও সম্ভব নয় এবং ঈমান ইলমের নূর বা জ্যোতি অন্তরে ধারণ করতে হলে আহলুল্লাহগণের তথা ওলীআল্লাহগণের ছোহবত গ্রহণ তাঁদের মুহব্বত অন্তরে ধারণ করার মাধ্যমে তাকাব্বুর বা আত্মগরীমার জুলমাত বা অন্ধকারের বৃত্ত থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে অন্যথায় জাহান্নামী হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না

প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক জাল্লা জালালুহু ইরশাদ করেন, যারা দম্ভ-অহঙ্কারে (ফুলে-ফেঁপে) আমার (খাঁটি) বান্দা হতে নাক সিটকায়, অচিরেই তারা লাঞ্ছিত-অপমানিত হয়ে জাহান্নামে ঢুকবে ( সূরা মুমিন/৬০)

আর হাদীছ শরীফে প্রসঙ্গে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণও অহঙ্কার থাকবে, সে বেহেশতে যেতে পারবে না

প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ইবনে হুসাইন ইবনে আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ক্বওল শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে মুজাদ্দিদে আযম হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী আরো বলেন, কারো অন্তরে কম-বেশি যতটুকু অহঙ্কার ঢুকবে, ঠিক পরিমাণে তার বুদ্ধি-বিবেক হ্রাস পাবে কাজেই নাহক্ব অহঙ্কার করা হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে কারণ, অহঙ্কারের পরিণতি খুবই ভয়াবহ এর সবচেয়ে বড় মেছাল হলো ইবলিস ইবলিস ছয় লক্ষ বছর ইবাদত করেছিল, লক্ষ লক্ষ বছর ফেরেশতাগণকে তালীম দিয়েছিল, তাবলীগ করেছিল, এরপরেও শুধুমাত্র অহঙ্কারবশতঃ আল্লাহ পাক-এর একটি আদেশ না মানার কারণে সে মালউন, মরদুদ, রজীম অর্থাৎ চির লানতপ্রাপ্ত, বিতাড়িত অভিশপ্ত হয়ে গেছে (নাউজুবিল্লাহ)

মুজাদ্দিদে আযম হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, অহঙ্কার এবং জাতীয় ধ্বংসাত্মক বদ্খাছলত যেমন- রিয়া, কিনা, হিংসা, বিদ্বেষ ইত্যাদি ক্বলব বা অন্তরের সৃষ্ট বিষয় তাই কেবলমাত্র তাযকিয়ায়ে ক্বলব বা অন্তর পরি শুদ্ধির মাধ্যমে এসব বদ্খাছলত থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব আর তাযকিয়ায়ে ক্বলবের ইলম আমল হচ্ছে ইলমে তাছাউফ এবং ক্বলবী যিকির-এর প্রশিক্ষণদাতা বা উস্তাদ হচ্ছেন পীরানে তরীক্বত বা হক্কানী-রব্বানী ওলী-আউলিয়াগণ

কাজেই প্রত্যেকের উচিত হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহগণের নিকট বাইয়াত হয়ে তাঁদের ছোহবত ইখতিয়ার করে ইলমে তাছাউফ অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে (জাহির বাতিন) ইছলাহ বা পরিশুদ্ধ করা তবেই কেবলমাত্র অন্তর থেকে অহঙ্কার দূরীভূত হয়ে গুমরাহ হওয়া থেকে বাঁচা যাবে