যারা তারাবীহ নামাযকে আট রাকায়াত বলে, তারা যে দলীল পেশ করে, তা মূলত-
- তাহাজ্জুদ নামায সংক্রান্ত দলীল
- হাদিছ শরীফের সনদ যয়ীফ
- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল হল ২০ রাকায়াত।
প্রথমতঃ
যারা বলে তারাবীহ নামায আট রাকায়াত পড়া সুন্নত, তারা দলীল হিসাবে বুখারী শরীফ প্রথম জিলদ ১৫৪ পৃষ্ঠার বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ উল্লেখ করে থাকে। হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, হযরত আবূ সালমাহ ইবনে আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাস করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে কত রাকায়াত নামায পড়তেন? তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন,“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে ও রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত অন্য মাসে এগার রাকায়াতের অধিক নামায পড়তেন না। আর তিনি তা চার,চার রাকায়াত করে পড়তেন।”
যারা বলে তারাবীহ নামায আট রাকায়াত পড়া সুন্নত, তারা দলীল হিসাবে বুখারী শরীফ প্রথম জিলদ ১৫৪ পৃষ্ঠার বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ উল্লেখ করে থাকে। হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, হযরত আবূ সালমাহ ইবনে আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাস করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে কত রাকায়াত নামায পড়তেন? তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন,“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে ও রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত অন্য মাসে এগার রাকায়াতের অধিক নামায পড়তেন না। আর তিনি তা চার,চার রাকায়াত করে পড়তেন।”
জবাবঃ কয়েকটি কারণে উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা কখনোই তারাবীহ নামায আট রাকায়াত প্রমাণিত হয়না।
প্রথম কারণঃ উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ “রমাদ্বান শরীফ মাসে” এর সাথে সাথে “রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত অন্য মাসে” একথাও উল্লেখ আছে। অর্থাৎ বলা হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য মাসে যেরূপ এগার রাকায়াত নামায পড়তেন তদ্রূপ রমাদ্বান শরীফ মাসেও এগার রাকায়াত নামায পড়তেন। এখন প্রশ্ন হলো- রমাদ্বান শরীফ মাসে নাহয় তারাবীহ নামায পড়েছেন কিন্তু গায়রে রমাদ্বান শরীফ (রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে) তারাবীহ নামায পড়বেন কিভাবে? তারাবীহ নামায শুধু মাত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে পড়তে হয়।
প্রথম কারণঃ উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ “রমাদ্বান শরীফ মাসে” এর সাথে সাথে “রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত অন্য মাসে” একথাও উল্লেখ আছে। অর্থাৎ বলা হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য মাসে যেরূপ এগার রাকায়াত নামায পড়তেন তদ্রূপ রমাদ্বান শরীফ মাসেও এগার রাকায়াত নামায পড়তেন। এখন প্রশ্ন হলো- রমাদ্বান শরীফ মাসে নাহয় তারাবীহ নামায পড়েছেন কিন্তু গায়রে রমাদ্বান শরীফ (রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে) তারাবীহ নামায পড়বেন কিভাবে? তারাবীহ নামায শুধু মাত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে পড়তে হয়।
মূলতঃ এ হাদীছ শরীফ-এ তারাবীহ নামাযের কথা বলা হয়নি বরং তাহাজ্জুদ নামাযের কথা বলা হয়েছে। কেননা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সারা বৎসরই তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। এ প্রসংগে বিখ্যাত মুহাদ্দিস, আল্লামা শায়খ শামসুদ্দীন কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা তাহাজ্জুদ নামাযকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আবূ সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রশ্ন ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার জবাব তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।” (কাওকাবুদ দুরারী শরহে বুখারী)
উক্ত হাদীছ শরীফ এর ব্যাখ্যায় ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “বিশুদ্ধ বা সহীহ মত এটাই যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতরসহ যে এগার রাকায়াত নামায পড়েছেন, তা তাহাজ্জুদ নামায ছিল” (আশয়াতুল লুময়াত)
এ প্রসংগে ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সম্পর্কিত, যা রমাদ্বান শরীফ ও গায়রে রমাদ্বানে একই সমান ছিল।” (মুজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আযীযী)
আর হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাখ্যায় বলেন,“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক, তিন, পাঁচ, সাত, নয় এবং এগার রাকায়াত বিতর নামায আদায় করতেন। তের রাকায়াতের বর্ণনাটি পরিত্যাজ্য, আর একখানা হাদীছ শরীফ এর মধ্যে সতের রাকায়াতের কথাও উল্লেখ আছে। আর এসকল নামাযের রাকায়াত যার সাথে আমি বিতর শব্দটি ব্যবহার করেছি, তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাত্রি বেলায় আদায় করতেন। আর এটাই হলো তাহাজ্জুদ নামায।” (ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন)
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, হযরত আবূ সালমাহ ইবনে আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত বুখারী শরীফ-এর উক্ত হাদীছ শরীফখানা তারাবীহ নামাযের পক্ষে মোটেও দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয় বরং ওটা তাহাজ্জুদ নামাযের দলীল হিসাবেই গ্রহণযোগ্য।
দ্বিতীয় কারণঃ তাছাড়া উক্ত হাদীছ শরীফখানা যে তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কিত তার আরো একটি অকাট্য দলীল হলো এই যে, হাদীছ শরীফ-এর জমহুর ইমামগণ উক্ত হাদীছ শরীফখানা উনাদের স্ব স্ব কিতাবে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসলিম শরীফ-এর ১ম জিলদ ২৫৪ পৃষ্ঠায়, ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুনানে আবূ দাউদের ১ম জিলদ ১৯৬ পৃষ্ঠায়, ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তিরমিযী শরীফ-এর ১ম জিলদ ৫৮ পৃষ্ঠায়, ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাসাঈ শরীফ-এর ১ম জিলদ ১৫৪ পৃষ্ঠায় এবং ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেকের ৪৭ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীছ শরীফকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।
আর যদি কোনো কিতাবে উক্ত হাদীছ শরীফকে রমাদ্বান শরীফ মাসের ইবাদত হিসাবে তারাবীহ অধ্যায়ে বর্ণনা করেও থাকে, তথাপিও ওটা তারাবীহ নামাযের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে পেশ করলে তা গ্রহণযোগ্য হবেনা। কারণ উসূল রয়েছে যে,যখন কোনো (হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে) মতবিরোধ দেখা দিবে তখন ওটা দলীল হিসাবে পরিত্যাজ্য হবে।
তৃতীয় কারণঃ তাছাড়া উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফকে মুহাদ্দিসীনে কিরামগণ সন্দেহযুক্ত বলেছেন। এ প্রসংগে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, অধিকাংশ আলেমগণ উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাপারে মতভেদ ব্যক্ত করেছেন। এমন কি কেউ কেউ উক্ত হাদীছকে সন্দেহযুক্ত বলে আখ্যায়িত করেন। (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী)
স্বয়ং উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে সহীহ সনদে চার রাকায়াতের বর্ণনাও রয়েছে। কাজেই সন্দেহযুক্ত হওয়ার কারণে উক্ত হাদীছ শরীফকে তারাবীহ নামাযের দলীল হিসাবে পেশ করা হাদীছ শরীফ-এর উসূল মুতাবিক সম্পূর্ণই অগ্রহণযোগ্য। কারণ, উসুল হলো- সন্দেহযুক্ত হাদীছ শরীফ-এর সন্দেহ যতক্ষণ পর্যন্ত দূর করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত উক্ত হাদীছ শরীফ দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবেনা। অতএব, উক্ত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসাবে পেশ করতে হলে, প্রথমে উহার সন্দেহ দূর করতে হবে।
চতুর্থ কারণঃ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা যে তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কিত, তার আরো একটি প্রমাণ হলো- উক্ত হাদীছ শরীফ-এ “তিনি উহা চার চার রাকায়াত করে পড়তেন”- একথা উল্লেখ আছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তা তারাবীহ নামায নয়। কারণ তারাবীহ নামায দুই, দুই রাকায়াত করে আদায় করা হয়।
মূলকথা হলো- উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হলো যে, আট রাকায়াত তারাবীহ নামাযের স্বপক্ষে বিদায়াতীরা মূল দলীল হিসাবে বুখারী শরীফ-এর যে হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে, ওটা মোটেও তারাবীহ নামাযের দলীল নয় বরং ওটা তাহাজ্জুদ নামাযের দলীল। কাজেই আট রাকায়াতের ব্যাপারে তাদের উক্ত দলীল মনগড়া, বানোয়াট ও কল্পনাপ্রসূত। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, সিহাহ সিত্তায় আট রাকায়াত তারাবীহ নামাযের বর্ণনা বা প্রমাণ নেই।
দ্বিতীয়তঃ
তারা আট রাকায়াতের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে যে, মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী, ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ উনার থেকে, তিনি ঈসা ইবনে জারিয়া হতে, তিনি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে আট রাকায়াত নামায পড়েছেন এবং বিতর নামায আলাদা আদায় করেছেন। (ক্বিয়ামুল লাইল)
জবাবঃ কয়েকটি কারণে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফখানা আট রাকায়াত তারাবীহ নামাযের পক্ষের দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম কারণঃ মুহাদ্দিসগণের মতে উক্ত হাদীছ শরীফখানা জঈফ বলে প্রমাণিত। কেননা উক্ত হাদীছ শরীফ-এর তিনজন রাবী জঈফ বলে প্রমাণিত হয়েছেন। তার মধ্যে একজন হলেন- মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী সম্পর্কে কিতাবে নিম্নোক্ত মত পেশ করা হয়েছে-
১। হাফেজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী জঈফ রাবী।
১। হাফেজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী জঈফ রাবী।
২। হযরত ইয়াকুব ইবনে শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি অনেক মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী।
৩। ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,তার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
৪। ইমাম আবূ যুরা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি মিথ্যাবাদী।
৫। ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি গ্রহণযোগ্য নন। (মিযানুল ই’তেদাল)
৩। ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,তার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
৪। ইমাম আবূ যুরা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি মিথ্যাবাদী।
৫। ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি গ্রহণযোগ্য নন। (মিযানুল ই’তেদাল)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানার প্রথম রাবী মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী জঈফ।
উক্ত হাদীছ শরীফ-এর দ্বিতীয় জঈফ রাবী হলেন- ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ্,উনার প্রসংগে ইমাম দারে কুৎনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি শক্তিশালী রাবী নন (বরং দূর্বল)।
উক্ত হাদীছ শরীফ-এর তৃতীয় রাবী হলেন- ঈসা ইবনে জারিয়া, তিনিও জঈফ রাবী। উনার প্রসংগে বলা হয় যে,
১। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তার নিকট বহু মুনকার হাদীছ রয়েছে।
২। ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী।
৩। ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, তার হাদীছগুলো পরিত্যাজ্য।
৪। “মিযানুল ই’তেদাল” কিতাবে তাকে জঈফ রাবীদের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে।
১। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তার নিকট বহু মুনকার হাদীছ রয়েছে।
২। ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী।
৩। ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, তার হাদীছগুলো পরিত্যাজ্য।
৪। “মিযানুল ই’তেদাল” কিতাবে তাকে জঈফ রাবীদের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা জঈফ। কাজেই জঈফ হাদীছকে সহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামাযের বিরুদ্ধে দলীল হিসাবে পেশ করা আহমকী ও জিহালত বৈ কিছুই নয়।
দ্বিতীয় কারণঃ অগত্যা হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত জঈফ হাদীছখানা যদিও সহীহ হিসাবে ধরে নেই এবং সাথে সাথে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত তাহাজ্জুদ নামাযের হাদীছ শরীফখানাকে যদিও তারাবীহ নামাযের দলীল হিসাবে গ্রহণ করা হয়, তথাপিও হাদীছ শরীফ-এর উসূল মুতাবিক ওটার দ্বারা আট রাকায়াত নামায পড়া জায়িজ হবেনা। কেননা উসূল হলো- যদি কোনো বিষয়ে দুই বা ততোধিক মত যুক্ত হাদীছ শরীফ পাওয়া যায়, তবে দেখতে হবে হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল কোন হাদীছ শরীফ-এর উপর। উনাদের আমল যে হাদীছ শরীফ-এর উপর হবে, সে হাদীছ শরীফ অনুযায়ীই আমল করতে হবে। যেমনঃ এ প্রসংগে কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
১। ইমাম হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,“যখন দুই হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে বিরোধ দেখা দিবে, তখন লক্ষ্য করতে হবে হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কোন হাদীছ শরীফ-এর উপর আমল করেছেন। অর্থাৎ হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে হাদীছ শরীফ মুতাবিক আমল করবেন, ওটাই গ্রহণযোগ্য হবে।” (আবূ দাউদ)
২। ইমাম হযরত মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন যে, “যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে কোনো বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়, আর তার মধ্য হতে একটির উপর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার আমল প্রমাণিত হয়, তখন যে হাদীছ শরীফখানার উপর উনাদের আমল থাকবে, সেটাই দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে।”
৩। ইমামুল মুজতাহিদীন হযরত আবূ বকর জাছছাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যখন কোনো বিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে দু’টি বিরোধপূর্ণ হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়, আর তার মধ্যে কোনো একটির উপর সলফে সালেহীনগণ আমল করেছেন বলে যদি প্রমাণিত হয়, তবে যে হাদীছ শরীফ-এর উপর সলফে সালেহীনগণ আমল করেছেন, সেটাই উত্তম দলীল হিসাবে সাব্যস্ত হবে। (আহকামুল কুরআন)
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে এটাই সাব্যস্ত হয় যে, তারাবীহ নামাযের পর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানাই দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য। আর উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম ও হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ বা এ ধরণের যত হাদীছ শরীফ রয়েছে তারাবীহ নামাযের ব্যাপারে, তা সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য। কারণ একমাত্র বিশ রাকায়াত সম্পর্কিত হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাদীছ শরীফ-এর উপরই খুলাফায়ে রাশেদীন, হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সলফে সালেহীন, ইমাম, মুজতাহিদ প্রত্যেকেরই আমল রয়েছে। অর্থাৎ উল্লেখিত সকলেই বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তেন।
অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত। তারাবীহ নামায আট রাকায়াত এ দাবী সম্পূর্ণই বাতিল, অমূলক, মনগড়া ও অজ্ঞতাপ্রসূত।
তৃতীয়তঃ
কেউ কেউ আবার আট রাকায়াতের স্বপক্ষে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে। যেমনঃ হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে,
ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুহম্মদ ইবনে ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি সায়েব ইবনে ইয়াযীদ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম, হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত তামীম দারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে এগার রাকায়াত নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (মুয়াত্তায়ে মালিক)
ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুহম্মদ ইবনে ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি সায়েব ইবনে ইয়াযীদ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম, হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত তামীম দারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে এগার রাকায়াত নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (মুয়াত্তায়ে মালিক)
জবাবঃ নিম্নোক্ত কারণে ওটা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
১। উক্ত হাদীছ শরীফখানা সন্দেহযুক্ত ইবারত। কারণ মুহম্মদ ইবনে ইউসূফের পাঁচজন ছাত্রের মধ্যে তিনজন এগার রাকায়াত, একজন তের রাকায়াত ও অপরজন একুশ রাকায়াতের কথা বর্ণনা করেছেন। আবার যে তিনজন এগার রাকায়াতের পক্ষে মত পেশ করেছেন, তাদের বর্ণনার মধ্যেও একজনের ইবারতের সাথে অপরজনের ইবারতের পার্থক্য রয়েছে। কাজেই উক্ত হাদীছ শরীফখানা যেহেতু সন্দেহযুক্ত তাই ওটা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
১। উক্ত হাদীছ শরীফখানা সন্দেহযুক্ত ইবারত। কারণ মুহম্মদ ইবনে ইউসূফের পাঁচজন ছাত্রের মধ্যে তিনজন এগার রাকায়াত, একজন তের রাকায়াত ও অপরজন একুশ রাকায়াতের কথা বর্ণনা করেছেন। আবার যে তিনজন এগার রাকায়াতের পক্ষে মত পেশ করেছেন, তাদের বর্ণনার মধ্যেও একজনের ইবারতের সাথে অপরজনের ইবারতের পার্থক্য রয়েছে। কাজেই উক্ত হাদীছ শরীফখানা যেহেতু সন্দেহযুক্ত তাই ওটা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
২। যে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেন, স্বয়ং তিনিই উক্ত হাদীছ শরীফকে তারাবীহ নামাযের ব্যাপারে আমলের উপযুক্ত মনে করেন না, আর তাই তিনি আট রাকায়াতের স্বপক্ষে কোনো মত পেশ করেননি। বরং বিশ রাকায়াতের স্বপক্ষেই রায় দিয়েছেন ও বিশ রাকায়াতের মতকেই গ্রহণ করেছেন।
যেমনঃ ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “হযরত ইয়াযীদ ইবনে রোমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময় লোকেরা বিতরসহ বিশ রাকায়াত (তারাবীহ) নামায পড়তেন। (মুওয়াত্তায়ে ইমাম মালেক পৃষ্ঠা-৪০, অনুরূপ বায়হাক্বী শরীফ)
এ প্রসংগে কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি (উনার দু’টি মত হতে),
হযরত ইমাম আবূ হানীফা,হযরত ইমাম শাফেয়ী, হযরত ইমাম আহমদ ও হযরত ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বিতর ব্যতীত বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামাযের মতকেই গ্রহণ করেছেন। (বিদায়াতুল মুজতাহিদ)
৩। যদি হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম আট রাকায়াতের নির্দেশই দিতেন, তবে পরবর্তীতে হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম অথবা অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারদের থেকেও এরূপ বর্ণনা বা আমল পাওয়া যেত, কিন্তু কোথাও এর প্রমাণ নেই। বরং এর বিপরীত বিশ রাকায়াতের বর্ণনা কিতাবে ঠিকই বর্ণিত হয়েছে।
যেমনঃ এ প্রসংগে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, লোকেরা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তেন। অনুরূপ হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালেও বিশ রাকায়াত নামায পড়া হতো। (এটা বায়হাক্বী সহীহ সনদে বর্ণনা করেন)
কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, “নিশ্চয়ই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাহিস সালাম এক ব্যক্তিকে, আমাদের নিয়ে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (বায়হাক্বী, কানযূল উম্মাল)
কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, “নিশ্চয়ই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাহিস সালাম এক ব্যক্তিকে, আমাদের নিয়ে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (বায়হাক্বী, কানযূল উম্মাল)
৪। যদিও ধরে নেই যে, প্রথম দিকে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম এগার রাকায়াত নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন, তথাপি ওটা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সহীহ রেওয়াতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম, হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম সহ সকল সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায আদায় করেন এবং বিশ রাকায়াতের উপরই ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর কারো পক্ষেই প্রমাণ করা সম্ভব না যে, আট রাকায়াতের উপর ইজমা হয়েছে। কাজেই এ দৃষ্টিকোন থেকেও আট রাকায়াতের দাবী সম্পূর্ণ অবান্তর প্রমাণিত হলো।
অতএব প্রমাণিত হলো যে, আট রাকায়াতের স্বপক্ষে উক্ত হাদীছখানা মোটেও গ্রহণযোগ্য বা অনুসরণীয় নয়। আট রাকায়াতের পক্ষে তাদের এ দলীলখানাও অগ্রাহ্য ও বাতিল বলে প্রমাণিত হলো।
মোট কথা হলো- আট রাকায়াতের স্বপক্ষে তারা মজবুত, অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য কোনো দলীলই পেশ করতে পারবেনা। পক্ষান্তরে সহীহ হাদীছ, ইজমায়ে আযীমত, আমলে উম্মত ও অসংখ্য অকাট্য, নির্ভরযোগ্য দলীলের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাদ্বান শরীফ মাসে জামায়াতের সহিত ও জামায়াত ব্যতীত সর্বাবস্থায় বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায আদায় করেছেন।
লিংকঃ http://shobujbanglablog.net/30435.html
লিংকঃ http://shobujbanglablog.net/30435.html