আমাদের সমাজের কিছু নামধারী তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদ
হিসাবে পরিচয় দানকারী ব্যক্তিবর্গ নিজেদেরকে সুন্নী অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামায়াতের অনুসারী দাবী করা সত্বেও ব্যক্তি তথা দুনিয়াবী স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষে
কুরআন শরীফ-এর কয়েকটি আয়াত শরীফ ও কয়েকটি হাদীছ শরীফ-এর ভুল, মনগড়া বানোয়াট,
বিভ্রান্তিমূলক অপব্যাখ্যা করে সরলপ্রান
মুসলমানদের মধ্যে ফিৎনার সৃষ্টি করছে এবং মসজিদে পুরুষের
সাথে সাথে মহিলাদের জামায়াত কায়েম করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা আমাদের হানাফী
মাযহাব মুতাবিক সম্পূর্ণ মাকরূহ তাহরীমী। সুতরাং সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে উক্ত
বিভ্রান্তিমূলক বানোয়াটি ও মাকরূহ তাহরীমী থেকে ফিরিয়ে এনে সহীহ ও হক্ব মত,
হক্ব পথ প্রদর্শনের লক্ষ্যে এ ফতওয়া প্রকাশের
প্রচেষ্টা। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ্ শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “তোমরা পরিপূর্ণভাবে
ইসলামে প্রবেশ কর।” আর ইসলাম সর্বোতভাবেই নিন্মোক্ত চারটি জিনিসের
মধ্যে সীমাবদ্ধ, যে গুলোর বাইরে ইসলামে কোন বিষয়ই গ্রহণযোগ্য নয়। আর তা হলো-
, যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়, “শরীয়তের দলীল মোট
চারটি (১) কুরআন শরীফ (২) হাদীছ শরীফ (৩) ইজমা ও (৪) কিয়াস।”
কেউ কেউ বলে থাকে
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ নামায,
রোযা, হজ্জ, যাকাত, জুময়া ও জামায়াতের আদেশ নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই
করেছেন। কাজেই জুময়া ও জামায়াত যদি শুধু পুরুষের জন্য হয়, তবে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি সবই
শুধুমাত্র পুরুষের জন্য হবে? তার জবাব হলো, আমাদের জেনে রাখা
দরকার যে, কুরআন শরীফ-এর প্রতিটি আয়াত শরীফই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। আর কুরআন শরীফ-এর কোন
আয়াত শরীফ-এর প্রথম ব্যাখ্যা হলো অপর একটি আয়াত শরীফ। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়, “কুরআন শরীফ-এর এক
আয়াত শরীফ অন্য আয়াত শরীফ-এর তাফসীর বা ব্যাখ্যা।” কুরআন শরীফ-এর
আরেকটি তাফসীর হলো হাদীছ শরীফ, আর উক্ত কুরআন শরীফ-এর ও হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যা
হলো ইজমা ও কিয়াস। কাজেই যে বিষয়ে কুরআন শরীফ-এ স্পষ্ট বর্ণনা না পাওয়া যাবে,
তাকে স্পষ্টভাবে বুঝার জন্য হাদীছ শরীফ-এর দিকে লক্ষ্য করতে হবে। যদি হাদীছ
শরীফ-এও স্পষ্ট বর্ণনা না পাওয়া যায়, তবে ইজমা ও কিয়াসের সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে।
কারণ কুরআন শরীফ-এ এমন অনেক বিষয়ই উল্লেখ রয়েছে, যা হাদীছ শরীফ
ব্যতীত বুঝা সম্ভব নয়।
আবার হাদীছ শরীফ-এও এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা ইজমা, কিয়াস ব্যতীত বুঝা সম্ভব নয়। যেমন কুরআন শরীফ-এ শুধু নামায পড়ার কথা বলা হয়েছে
কিন্তু কুরআন শরীফ-এর কোথাও কত ওয়াক্ত পড়তে হবে, কত রাকায়াত পড়তে হবে,
তা বর্ণনা করা হয়নি। আবার হাদীছ শরীফ-এ যদিও কত ওয়াক্ত নামায পড়তে হবে এবং কোন
নামায কত রাকায়াত পড়তে হবে, তা বর্ণনা করা হয়েছে কিন্তু কোনটা ফরয, কোনটা ওয়াজিব,
কোনটা সুন্নতে মুয়াক্কাদা, কোনটা মুস্তাহাব বা নফল, হাদীছ শরীফ-এ তা
স্পষ্ট উল্লেখ নেই। বরং ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা, কিয়াসের দৃষ্টিতে
ইজতিহাদ করতঃ তাকিদ অনুযায়ী ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা,
মুস্তাহাব ও নফলে বিভক্ত করেছেন।
সুতরাং কুরআন শরীফ-এ
যদিও নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, জুময়া, জামায়াত ইত্যাদির
আদেশ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই পাওয়া যায়, কিন্তু হাদীছ শরীফ,
ইজমা ও কিয়াসে এ ব্যাপারে নারীপুরুষের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্যও পরিলক্ষিত হয়।
যেমন পুরুষের নামাযে আযান ও ইকামত রয়েছে, নারীদের তা নেই। পুরুষদের
সূরা কিরায়াত পড়তে হয় আওয়াজ করে (মাগরিব, ইশা ও ফযর)। কিন্তু নারীদের
চুপে চুপে পড়তে হয়। এমনিভাবে নারীপুরুষে হাত বাঁধায় ভিন্নতা, রুকু, সিজদায় ভিন্নতা,
বসায় ভিন্নতা। অনুরূপভাবে পুরুষদের জন্য জুময়া ফরযে আইন, ঈদের নামায ওয়াজিব
(হানাফী মাযহাবে) এবং জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিন্তু মহিলাদের জন্য তা নয়।
কেননা হাদীছ শরীফ-এর কোথাও উল্লেখ নেই যে, মহিলাদেরকে জুময়া, ঈদ ও জামায়াতে
উপস্থিত হওয়ার জন্য তাকিদ করা হয়েছে। আর তাই সকল ফিকাহের বিশ্ববিখ্যাত কিতাবসমূহে
উল্লেখ করা হয়েছে, জুময়া, ঈদ ও জামায়াত শুধু পুরুষদের জন্য।
যেমনঃ তাফসীরে
খাযিন ও বাগবীতে উল্লেখ করা হয়েছে, “জেনে রাখ যে, জুময়ার নামায পড়া
ফরযে আইন, তাদের জন্য যারা বুদ্ধিমান, বয়ঃপ্রাপ্ত, স্বাধীন পুরুষ ও
মুকীম।” অনুরূপভাবে ফাতহুল ক্বাদীর, আলমগীরী, বাহরুর রায়েক
ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবেই উল্লেখ রয়েছে। এমনিভাবে সকল ফিক্বাহর কিতাবে উল্লেখ
রয়েছে যে, জুময়ার নামায ফরয হওয়ার জন্য যে শর্ত, ঈদের নামায ওয়াজিব হওয়ার
জন্যও সেই একই শর্ত। অর্থাৎ পুরুষদের জন্যই ঈদের নামায ওয়াজিব, নারীদের জন্য নয়।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সময় হতেই উল্লেখিত ইবাদতসমূহে নারী, পুরুষের মধ্যে
ভিন্নতা বা পার্থক্য। এ পার্থক্য নতুন কোন বিষয় নয়। বরং চৌদ্দশত বছর পূর্বের।
কাজেই চৌদ্দশত বছর পর নারী পুরুষে কোন পার্থক্য নেই বলার মত দুঃসাহস কাউকে দেওয়া
হয়নি।এমনিভাবে শুধু নামায বা জামায়াতেই নয়, বরং প্রায় ইবাদতেই
নারীপুরুষে পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “যখন নামায আদায় হয়ে
যায়, তখন তোমরা জমীনে ছড়িয়ে পড় এবং রিযিক তালাশ কর।” এ আয়াত শরীফ-এও নারী
পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে জমিনে ছড়িয়ে পড়তে বলা হয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনিই
আবার অন্য আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “তোমরা নারীরা ঘরের
মধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাক।” আর হালাল রিযিক অর্জন করা একমাত্র পুরুষেরই
দায়িত্ব। নারীদেরকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বরং নারীদেরকে ঘরে আবদ্ধ হয়ে থাকতে বলা
হয়েছে। কাজেই এ বিষয়েও আমরা নারী পুরুষে পার্থক্য দেখতে পাই। এমনিভাবে নারীরা কখনও
দেশের রাষ্ট্র প্রধান হতে পারবে না, কেননা হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, “ঐ সম্প্রদায় কোন
সফলতা অর্জন করতে পারবে না, যে সম্প্রদায়ের নেতা হবে
মহিলা।”
সুতরাং উপরোক্ত
বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, নারীপুরুষের উপরোল্লিখিত
পার্থক্য কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াস সমর্থিত এবং যারা বলে উল্লিখিত
ইবাদতে নারীপুরুষে কোন পার্থক্য নেই, তারা নিতান্তই অজ্ঞ, জাহেল। এবং এর
দ্বারা এটাও প্রমাণিত যে, শুধুমাত্র কুরআন শরীফ-এর কয়েকটি আয়াত শরীফ-এর
দ্বারা মহিলাদের জুময়া ও জামায়াতে উপস্থিত হওয়া জায়িয বলা গুমরাহী ব্যতীত কিছুই
নয়। প্রথম যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার হাকীকত কেউ কেউ বলে থাকে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায়
মহিলারা মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়তেন এবং এখনও মক্কামদিনায় মহিলাগণ জামায়াতে
উপস্থিত হন, তবে এর ফায়সালা কি? এর জবাব হলো শরীয়তে এমন
অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় ছিলনা কিন্তু হযরত
সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময় তা উৎপত্তি লাভ করে।
যেমন “জুময়ার ছানী আযান”
এ ছানী আযান সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা। হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস
সালাম, মুসলমান ও ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে ইজতিহাদ করতঃ উক্ত ছানী আযানের প্রথা চালু
করেন এবং এর উপর সকল হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজমা
প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুরূপভাবে যদিও প্রথম যুগে ইসলাম ও মুসলমানদের বৃহত্তর স্বার্থে
মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল কিন্তু হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস
সালাম উনার খিলাফতকালে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তীতে ইমাম, মুজতাহিদ
রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ
তাহরীমী ফতওয়া দেন এবং এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত।
কেননা প্রথম যুগে মহিলাদের
জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়ার কারণ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
ইমাম হযরত তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি
বলেন, “মহিলাদের ইসলামের প্রথম যুগে জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি
প্রদান করার কারণ হলো, বেদ্বীনদের সম্মুখে মুসলমানদের জনসংখ্যা ও
জনশক্তি বৃদ্ধি করা” (মায়ারিফে মাদানী)। ইমাম হযরত আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, (শুধু তাই নয়) সে যুগ
ফিৎনা, ফাসাদ হতেও সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল, কিন্তু বর্তমানে তার কোন কারণই অবশিষ্ট নেই। এবং
শুরুহাতের (ব্যাখ্যার) অধিকাংশ কিতাবেই প্রথম যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি
দেওয়ার কারণ হিসেবে তা’লীম বা ইলম অর্জন করাকেই উল্লেখ করা হয়েছে।
এবং তা আরো
স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বুখারী শরীফ-এর ৯১৫ নং হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনা
দ্বারা। এ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করা হয়, হযরত উম্মে আতিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “ঈদের দিন আমাদেরকে
বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হতো, আমরা কুমারী মেয়েদেরকে, এমনকি ঋতুবর্তী
মহিলাদেরকেও ঘর থেকে বের করতাম। অতঃপর পুরুষদের পেছনে থেকে তাদের তাকবীরের সাথে
সাথে তাকবীর পড়তাম এবং তাদের দোয়ার সাথে সাথে আমরাও ঐ দিনের বরকত ও পবিত্রতা লাভের
আশায় দোয়া করতাম।” এ হাদীছ শরীফ-এ এবং অন্যান্য আরো হাদীছ শরীফ-এ
স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে যে, ঋতুবর্তী মহিলাগণও ঈদগাহে উপস্থিত হতেন। অথচ
শরীয়তে ঋতুবর্তী মহিলাদের জন্য নামায সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং তাদের ঈদগাহে বা
জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি যদি শুধুমাত্র নামাযের জন্য হতো, তবে ঋতুবর্তী
মহিলাগণ ঈদগাহে উপস্থিত হতেন না। মূলতঃ প্রথম যুগে নামাযসহ সকল অনুষ্ঠানাদিতে
মহিলাদের উপস্থিত হওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, তা’লীম গ্রহণ করা।
তদুপরি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন এবং সে সময় ফিৎনার আশংকা কল্পনাও করা যায় না।
তথাপি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদেরকে সুসজ্জিতভাবে, সুগন্ধি ব্যবহার করে
মসজিদে যেতে নিষেধ করেন এবং তিনি আরো বলেন,“সুগন্ধি
ব্যবহারকারীনী মহিলা যিনাকারীনী।” আরো ইরশাদ করা হয়, “যে মহিলা সুগন্ধি
ব্যবহার করে, সে যেন ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করে আমার সাথে
নামাযে আসে।” শুধু তাই নয়, সাথে সাথে পর্দারও গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই দেখা
যায়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম, ফযরের নামায এত অন্ধকার থাকতে শেষ করতেন যে, মহিলাগণ নামায পড়ে
যখন চলে যেতেন, তখন তাদেরকে স্পষ্টভাবে চেনা যেত না।
আর এ পর্দার গুরুত্ব
বুঝাতে গিয়েই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, “মসজিদে নববীর এ দরজাটি যদি মহিলাদের জন্য
নির্দিষ্ট করে দিতাম, তবে খুবই উত্তম হতো। অর্থাৎ পর্দার জন্য খুবই
সুবিধা হতো।” কিন্তু বর্তমান যামানায় ঐরূপ ব্যবস্থা বা কঠোরতা কল্পনাও
করা যায় না। আর এদিকে লক্ষ্য করেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “মহিলাদের মসজিদে
জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে গোপন প্রকোষ্টে নামায পড়া সর্বোত্তম।” সুতরাং উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মহিলাদের প্রথম যুগে
জামায়াত বা ঈদগাহে অথবা অন্যান্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার একমাত্র উদ্ধেশ্য ছিল,
তা’লীম গ্রহণ করা। আর আমরা প্রথমেই উল্লেখ করেছি, আমাদের দলীল হলো
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াস। কোন দেশ, ব্যক্তি আমাদের দলীল
নয়। কাজেই যেখানে মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী,
এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে এ ইজমার
বিরোধিতা করে মক্কামদীনার অনুসরণ করা মোটেও জায়িয হবে না।
পর্দার গুরুত্ব ও
তাৎপর্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ ফরমান, (হে মহিলাগণ) “তোমরা তোমাদের ঘরের
মধ্যে আবদ্ধ থাক, জাহিলিয়াত যুগের মেয়েদের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন
করোনা।”অন্য আয়াত শরীফ-এ উল্লেখ করা, “যখন তোমরা মহিলাদের
নিকট কোন জিনিস চাও, তখন পর্দার আড়াল হতে চাও।” হাদীছ শরীফ-এ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি বলেন,“মেয়েলোক হলো আবৃত থাকার বস্তু। যখনই তারা বেপর্দায় রাস্তায়
বের হয়,শয়তান উঁকিঝুকি মারে তাদের দ্বারা পাপ কাজ সংঘঠিত করার
জন্য।” হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ করা হয়, “দেখনেওয়ালা আর
দেখানেওয়ালী উভয়ের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লানত।”
হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ
করা হয়,একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত সালমা
আলাইহাস সালাম ও হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম উনারা বসা ছিলেন। এমন সময়
একজন অন্ধ সাহাবী হযরত মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আসতে লাগলেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা ভেতরে চলে যাও।” তখন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিমাস সালাম
তিনিবললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! তিনি কি অন্ধ নন?তিনি তো আমাদেরকে
দেখছেন না।” সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “তিনি যদিও অন্ধ
কিন্তুআপনারা তো অন্ধ নও, আপনারা কি উনাকে দেখছেন না?”
এ হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, কোন পুরুষ বেগানা মহিলাদের
দিকে দৃষ্টি দেওয়া যেরূপ কবিরা গুনাহ, তদ্রূপ মহিলারাও বেগানা
পুরুষের দিকে দৃষ্টি দেওয়া কবিরা গুনাহ।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ করা
হয়, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস
সালাম তিনি একদিন উনার মেয়ে উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম উনার সাথে বসা ছিলেন। এমন
সময় উনার একটি হাদীছ শরীফ মনে পড়ে
যায় এবং সাথে সাথে তিনি দৌড় দেন এবং দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় যেহেতু তিনি সাধারণ
লোকের চেয়ে কিছু লম্বা ছিলেন, সেহেতু দরজার চৌকাঠে উনার মাথা
লেগে মাথা ফেটে যায়, তিনি এ অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ আসলেন যে, উনার কপাল মুবারক
থেকে ঝর ঝর করে রক্ত পড়তে লাগলো। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে উমর ইবনুল খত্তাব
আলাইহিস সালাম!কে আপনার মাথায় আঘাত করলো?” তখন হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম বলেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম !আরবের বুকে এমন কোন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেনি, যে হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার মাথায় আঘাত করতে
পারে। তবে আপনার একটি হাদীছ শরীফ আমার মাথায় আঘাত করেছে।” তখন সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “হেউমর ইবনুল খত্তাব
আলাইহিস সালাম! কোন সেই হাদীছ শরীফ? যে হাদীছ শরীফআপনার মাথায় আঘাত করেছে।” তখন হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম বলেন, আপনি বলেছেন, “কোন বেগানা পুরুষ
যেন কোন বেগানা মহিলাদের সাথে নিরিবিলিতে একত্রিত না হয়, কেননা তখন তাদের
তৃতীয় বন্ধু হয় শয়তান।” যেহেতু আমি আমার মেয়ে উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসাআলাইহাস
সালাম উনার সাথে বসা ছিলাম। এ হাদীছ শরীফ স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে দৌড়
দিয়ে দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময়
চৌকাঠে মাথা লেগে মাথা ফেটে যায়।
এবার চিন্তা ফিকির করেন,
হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পর্দার কতটুকু গুরুত্ব
দিতেন। আর এ পর্দার গুরুত্বের জন্যই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম ও
অধিক ফযীলতপূর্ণ বলে উৎসাহ প্রদান করেন। আর তাই দেখা যায় পর্দা ফরয হওয়ার পূর্বে
মহিলাগণ যেভাবে মসজিদে যেতেন কিন্তু পর্দা ফরয হওয়ার পর ক্রমেই তা কমতে থাকে।
মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার উৎসাহ ও ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করা
হয়, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালমা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহিলাদের জন্য উত্তম
মসজিদ হলো, তার ঘরের গোপন প্রোকষ্ঠ।” (সুনানুল কুবরা, আহমদ, মুয়াত্তা ইমাম
মালেক)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ
উল্লেখ করা হয়, হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহিলাদের অন্ধকার
কুঠরীর নামায মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক প্রিয়।” (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী)
হাদীছ শরীফ-এ আরো
উল্লেখ করা হয়, হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহিলাদের ঘরে নামায
পড়া, বারান্দায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম এবং সাধারণ ঘরে নামায পড়ার
চেয়ে গোপন প্রকোষ্ঠে নামায পড়া সর্বোত্তম।” (আবূ দাউদ শরীফ)
কেউ কেউ এ হাদীছ
শরীফ-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, দেখুন এ হাদীছ শরীফ-এ
মসজিদের উল্লেখ নেই, তাই তুলনাহীনভাবে মসজিদ শ্রেষ্ঠ। এটা তাদের সম্পূর্ণ মনগড়া
ও বিভ্রান্তিমূলক ব্যাখ্যা। কেননা, তারা এমন একখানা হাদীছ শরীফও পেশ করতে পারবে না,
যে হাদীছ শরীফ-এ মহিলাদের মসজিদে নামায পড়া উত্তম বলা হয়েছে। অথচ নিম্মোক্ত
হাদীছ শরীফসমূহে মহিলাদের মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে গোপন প্রকোষ্ঠে নামায পড়া উত্তম
বলা হয়েছে। এ হাদীছ শরীফগুলো কি তাদের চোখে পড়েনা? হাদীছ শরীফ-এ আরো
উল্লেখ করা হয়, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার
থেকে বর্ণিত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “কোন মহিলার জন্য তার খাছ
ঘরে নামায পড়া সাধারণ ঘরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম এবং সাধারণ ঘরে নামায পড়া বাইরের
ঘরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম এবং বাইরের ঘরে নামায পড়া মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।”(সুনানুল কুবরা লিল
বায়হাক্বী)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়,“হযরত উম্মে হুমাইদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,ইয়া রাসূলাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমরা মহিলারা আপনার
সাথে নামায পড়তে ইচ্ছুক কিন্তু আমাদের স্বামীরা আমাদেরকে নিষেধ করেন। অতঃপর
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আপনাদের জন্য সাধারণ ঘরে
নামায পড়ার চেয়ে, খাছ ঘরে নামায পড়া উত্তম এবং সাধারণ ঘরে নামায
পড়া মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে সর্বোত্তম।” (সুনানুল কুবরা, জাওহারুন নক্বী)
এ হাদীছ শরীফ দ্বারা
স্পষ্টই বুঝা যায় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বামী কর্তৃক মহিলাদের মসজিদে
যাওয়ার নিষেধকে সমর্থন করেন। যদি তিনি সমর্থন না করতেন, তবে অবশ্যই তিনি
বলতেন, বাঁধা দেওয়া ঠিক হবে না। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের মসজিদে
যেতে নিষেধ করা নাজায়িয নয় বরং জায়িয। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ করা হয়, “হযরত উম্মে হুমাইদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমি আপনার সাথে
নামায পড়তে অধিক আগ্রহী। অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “অবশ্যই আমি জানি আপনি আমার সাথে নামায
পড়তে ভালবাসেন বা অধিক আগ্রহী। কিন্তু আপনার,আমার মসজিদে নামায
পড়ার চেয়ে আপনার গোত্রের মসজিদে নামায পড়া
উত্তম এবং গোত্রের মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে হুজরায় নামায পড়া আরো উত্তম এবং হুজরায়
নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম।” (আহমদ, ইবনে হাব্বান, তিবরানী)
এ হাদীছ শরীফ-এ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি উনার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায পড়া উত্তম বলেছেন। যেখানে ঘরে নামায
পড়া মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নামায
পড়ার চেয়ে উত্তম, সেখানে অন্য মসজিদে নামায পড়তে যাওয়া কি করে ফযীলতের আশা
করা যায়? অথচ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে এক
রাকায়াত নামায পড়া লক্ষ রাকায়াত নামাযের চেয়েও সর্বোত্তম। কাজেই যদি জামায়াতের
ফযীলতের জন্য মহিলাদের মসজিদে আসার অনুমতি দেওয়া হতো, তবে ঘরে নামায পড়া
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম বলা হতোনা।
মূলতঃ এর দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, মহিলাদের মসজিদে বা ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি ইলম
অর্জনের জন্যই দেওয়া হয়েছিল। হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ রয়েছে যে, “হযরত আবু ওমর
শায়বানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তিনি দেখেছেন হযরত
আব্দুল্লাহআলাইহিস সালাম উনাকে জুময়ার দিন
মহিলাদেরকে মসজিদ হতে একথা বলে বের করে দিতেন যে, “হে মহিলারা! আপনারা আপনাদের ঘরে চলে যান, কারণ নামাযের জন্য আপনাদের ঘরই উত্তম।” (তিবরানী শরীফ)
উপরোক্ত হাদীছ
শরীফসমূহের আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু মহিলাদের
ঘরে নামায পড়ার জন্য কার্যতঃ উৎসাহ প্রদান করেননি বরং ঘরে নামায পড়ার বহু ফযীলতও
বর্ণনা করেছেন। যেমন হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়,“মহিলাদের মসজিদে
জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে একা নামায পড়ায় ২৫ গুণ বেশী ফযীলত পাওয়া যায়।” (দায়লমী শরীফ ২য় জিলদ,
পৃষ্ঠা-৩৮৯)
যেখানে ঘরে একাকী নামায পড়ায় ২৫ গুণ ফযীলত, সেখানে মসজিদে গিয়ে
জামায়াতে নামায পড়ার হেতু কি, তা আমাদের বোধগম্য হয় না। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব
আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞা ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সমর্থনে
পর্দার গুরুত্ব ও মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার উৎসাহ ও ফযীলতপূর্ণ হাদীছ শরীফ-এর দিকে
লক্ষ্য রেখে আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম
ইজতেহাদ করতঃ মহিলাদেরকে মসজিদে এসে জামায়াতে নামায পড়তে নিষেধ করে দেন। তখন
মহিলারা হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাএর নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন,
তখন হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, “যদি হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদেরকে এ অবস্থায় পেতেন, যে অবস্থায় হযরত উমর
ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম পেয়েছেন, তবে অবশ্য তিনিও তোমাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ
করতেন।” হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এ কথার আসল অর্থ হলো হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম যা করেছেন, ঠিকই করেছেন। অর্থাৎ আমি এটাকে পূর্ণ সমর্থন
করি। আর এটাকে সমর্থন করার অর্থই হলো, মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ
করা।
কাজেই যেখানে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস
সালাম কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে ইজতেহাদ করতঃ মহিলাদের মসজিদে উপস্থিত
হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, সেখানে এর বিরোধিতা করে প্রথম যুগের দোহাই দিয়ে
মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। কেননা হাদীছ
শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়, “আপনাদের জন্য আমার সুন্নত ও
আমার হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত
অবশ্যই পালনীয়।” (মিশকাত শরীফ)
এ হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের মসজিদে
যাওয়ার অর্থই হলো এ হাদীছ শরীফ-এর হুকুমকে অস্বীকার করা। আর পৃথিবীতে এমন অনেক
বিষয় রয়েছে, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা কিন্তু হযরত সাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময় তা উৎপত্তি লাভ করে। যেমন জুময়ার
ছানী আযান, তা হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার সময় উৎপত্তি
লাভ করে, এমনিভাবে মহিলারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় মসজিদে
যেতেন কিন্তু হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময় তা নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
যেটা পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে। আর হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম,
হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হুকুম আহকাম, বিধিনিষেধও আমাদের
জন্য অবশ্যই অনুসরণীয়।
কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার প্রত্যেক হযরত
সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তারকা সাদৃশ্য, তাদের যে কাউকে
তোমরা অনুসরণ করবে,হিদায়েত পেয়ে যাবে।”
এ হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, হযরত সাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাদের প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজ
অনুসরণযোগ্য। কেননা উনাদের অনুসরণ করার অর্থই হলো, মহান আল্লাহ পাক ও
উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করা। আর উনাদের হুকুমকে
অস্বীকার করার অর্থই হলো মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার হুকুমকে অস্বীকার করা।
আর বিশেষ করে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস
সালাম উনার ফাযায়িল ফযীলত যেটা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। উনার সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ
উল্লেখ করা হয়,“নবীদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস
সালাম, অতঃপর হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম।”
হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ করা হয়, “যদি আমার পরে কেউ
নবী হতো তবে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালামই নবী হতেন।”
অন্য হাদীছ শরীফ-এ
বলা হয়, “স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার জবানে কথা বলেন।”
অর্থাৎ হযরত উমর
ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার কথার সমর্থনে মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশটিরও বেশী
আয়াত শরীফ নাযিল করেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, “শয়তান হযরত উমর
ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনকে দেখলে, তার মাথা খারাপ হয়ে
যেত, কোন রাস্তা দিয়ে পালাবে।”
যে হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার এত ফযীলত ও মর্যাদা, উনার পক্ষে কি করে
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর বিরোধিতা করা সম্ভব? এটা কল্পনাও করা যায়
না। কাজেই হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম, মহিলাদের মসজিদে
যাওয়ার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, তা অবশ্যই
কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত ও আমাদের অনুসরণীয় আর উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম এটাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। উনার সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ
উল্লেখ রয়েছে,“তোমরা অর্ধেক দ্বীন গ্রহন করবে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম উনার থেকে।”
অথচ আমাদের সমাজেরই
কিছু জাহেল কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি কখনো মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করেননি। তাদের উক্ত
বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা। আর তাদের এ চির সত্যকে অস্বীকার করার কারণ দু’টির একটি তো অবশ্যই
হবে (১) তারা এ ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ, তাই তারা মিথ্যা প্রলাপ
বকছে। (২) তারা মনে করে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞাকে
মিথ্যা প্রমাণিত করতে পারলে তাদের পক্ষে মসজিদে যেতে আর কোন বাধা নিষেধ থাকবে না।
মূলতঃ এতে তারা মোটেও সফলকাম হবেনা। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম যে
মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন, নিম্নে বিশ্ববিখ্যাত ও
নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে তার দলীলসমূহ পেশ করা হলোঃ
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে
মসজিদে যেতে নিষেধ করেন, তখন মহিলারা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম আপনাদের এখন যে অবস্থায়
দেখছেন, এরূপ অবস্থায় যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখতেন, তবে আপনাদেরকে মসজিদে
যাওয়ার অনুমতি দিতেন না।” (ফাতহুল ক্বাদির, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, ফতওয়ায়ে রহিমীয়া)
মহিলারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
যুগে জামায়াতে উপস্থিত হতো, (পরবর্তীতে) হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম
তিনি মহিলাদেরকে জামায়াতে আসতে নিষেধ করেছেন, তখন মহিলারা উম্মুল
মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন,
তখন হযরত উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম আপনাদের যে অবস্থা অবগত
হয়েছেন, তা যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিঅবগত হতেন, তবে তিনিও আপনাদেরকে মসজিদে
যাওয়ার অনুমতি দিতেন না।” (গায়াতুল আওতার, তাহতাবী, শামী, দুররুল মুখতার, রদ্দুল মোহতার, ফতওয়ায়ে হিন্দীয়া, আইনুল হেদায়া, নেহায়া, হেদায়া)
আর হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞাকে
যে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি পূর্ণ
সমর্থন করেছেন, তা হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, “যদি হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদের বর্তমান
অবস্থা দেখতেন, তবে অবশ্যই নিষেধ করতেন।” (আবু দাউদ, বুখারী, মুসলীম শরীফ)
সুতরাং উপরোক্ত কিতাবসমূহের আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই
প্রমাণিত হলো যে, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে
মসজিদে যেতে নিষেধ করেন এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি তাতে পূর্ণ সমর্থন করেন এবং এর দ্বারা এটাও
প্রমাণিত হলো যে, যারা বলে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি নিষেধ
করেননি, তারা হয় অজ্ঞ, জাহেল অথবা নিরেট মিথ্যাবাদী। ইজমায়ে উম্মত
আর পরবর্তীতে ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা পর্দার গুরুত্ব
মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার উৎসাহ ও ফযীলতপূর্ণ হাদীছ শরীফ ও হযরত উমর ইবনুল খত্তাব
আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞা ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সমর্থনের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ কেউ বিনা শর্তে
মাকরূহ তাহরীমী ফতওয়া দেন, আর কেউ শর্ত সাপেক্ষে মাকরূহ তাহরীমী ফতওয়া দেন
তবে হানাফী মাযহাবের সকল ইমামগণই বিনা শর্তে মাকরূহ তাহরীমী ফতওয়া দেন এবং উক্ত
ফতওয়ার উপর উম্মতের ইজমা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা লাভ করে, বিশেষ করে হানাফী
মাযহাবের ইমাম মুজতাহিদদের মধ্যে। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়, “মহিলাদের জামায়াতের
জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” (ইমদাদুল আহকাম)
কাজেই যেখানে
বিশ্বের অসংখ্য ইমাম, মুজতাহিদ মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নাজায়িয অর্থাৎ মাকরূহ
তাহরীমী ফতওয়া দেন, সেখানে এর বিরোধিতা করে এটাকে জায়িয বলা গুমরাহী ছাড়া কিছুই
নয়। আর এদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ ফরমান, “যে কারো নিকট
হেদায়েত বিকশিত হবার পর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
বিরুদ্ধাচরণ করবে, আর মুমিনদের পথ রেখে
ভিন্ন পথের অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে।” শায়খ হযরত আহমদ ইবনে
আবু সাঈদ মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি এ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেছেন, “এ আয়াতে মুমিনদের বিরোধীতাকে
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা হিসেবে আখ্যায়িত করা
হয়েছে। অতএব রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ-এর মতো
তাদের ইজমাও অকাট্য ও প্রামান্য দলীল বলে পরিগণিত হবে। (নুরুল আনোয়ার)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও
তার তাফসীর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম মুজতাহিদদের মতের
বিরোধিতা করার অর্থ হলো, মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করা, যা স্পষ্টই গুমরাহী। আর এটাও যেনে রাখা দরকার যে,
ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যে ফতওয়া দিয়েছেন, তা কুরআন-সুন্নাহর
বিপরীত নয় বরং কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক। তাই ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন,
“আমার কোন কথা যদি তোমরা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর খিলাফ পান,
তবে তা প্রাচীরে ছুড়ে ফেলে দিন। এর অর্থ হলো উনার কোন কথাই কুরআন শরীফ,
হাদীছ শরীফ-এর খিলাফ ছিলনা। কারণ তিনি ছিলেন হাকিমে হাদীছ অর্থাৎ পৃথিবীর সকল
হাদীছ শরীফই উনার মুখস্ত ছিল। কাজেই ভুল হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। তাই দেখা যায় পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ অগণিত
ইমাম, মুজতাহিদ, আলেম, মুহাদ্দিস, মুফাচ্ছির, মুহাক্কিক, মুদাক্কিক এবং
পৃথিবীর অধিকাংশ লোক যুগ যুগ ধরে সর্বশ্রেষ্ট মাযহাব হানাফী মাযহাবের অনুসরণ করে
আসছে এবং অনেকেই হানাফী মাযহাবের অন্তর্ভূক্ত হতে পেরে মহান আল্লাহ পাক উনার
দরবারে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি যখন পৃথিবীতে
তাশরীফ আনবেন, তখন উনি যে ইজতিহাদ করবেন, উনার সেই ইজতিহাদকৃত
মাসয়ালাগুলো হানাফী মাযহাবের মাসয়ালার সাথে হুবহু মিলে যাবে। এবার চিন্তা করে
দেখুন, হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইজতিহাদ কত সুক্ষ্ম। আর ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে ইমাম শাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “সমস্ত মানুষ ইলমে
ফিক্বহার দিক দিয়ে ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার নিকট সন্তান তুল্য।” (তারিখে বাগদাদ
মানাকেবে আবু হানীফা এলাউস সুনান)
কাজেই কুরআন শরীফ,
হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের দৃষ্টিতে সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়
যে, ইমাম-মুজতাহিদদের কোন মাসয়ালার বিরোধিতা করা (সেটা যে কোন মাযহাবেরই হোক না
কেন) মূলতঃ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এরই বিরোধিতা করা। সুতরাং মূল কথা হলো,
মহিলাদের মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে এবং যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বে তা অনুসৃত হয়ে আসছে। ইজমা ও কিয়াস যেহেতু কুরআন
শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এরই অন্তর্ভূক্ত ও সমর্থিত, সেহেতু উক্ত ইজমাকে
অস্বীকার করা বা মুমিনদের প্রচলিত পথের বিরোধিতা করা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর
দৃষ্টিতে প্রকাশ্য গুমরাহী। নিম্নে মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া
মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার দলীলসমূহ পেশ করা হলো মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে
যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী উনার অকাট্য দলীলসমূহঃ
১. হেদায়ার লেখক বলেন, যুবতী মহিলাদের
জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। তিনি আরো বলেন, জামায়াত বলতে এখানে
(পাঁচ ওয়াক্তসহ) জুময়া,ঈদাইন, কুসূফ, ইস্তেস্কা ইত্যাদি
সবই অন্তর্ভূক্ত। আমাদের ফকীহগণ বলেন কেননা উনাদের (মহিলাদের) জামায়াতের
জন্য বের হওয়ায় ফিৎনার আশঙ্কা রয়েছে, আর ফিৎনা হারামের
অন্তর্ভূক্ত, আর যা হারাম কাজে সহায়তা করে তাও হারাম, এ কারণেই ফকীহগণ
মাকরূহ তাহরীমীর দ্বারা মূলতঃ মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়াই
উদ্দেশ্য। (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৫৬, ফাতহুল মুলহিম, শরহে মসলিম ২য় জিলদ,
পৃষ্ঠা-৪২৮, তাফহীমুল মুসলিম ১৪ জিলদ, পৃষ্ঠা- ২১)
২. উলামায়ে মুতাআখখেরীনগণ মহিলাদের জামায়াতের জন্য
মসজিদে যাওয়া নিষেধ বলে মত প্রকাশ করেন। কেননা হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে মরফূ হাদীছ হিসাবে বর্ণিত রয়েছে যে, মহিলাদের হুজরায়
নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম এবং ঘরের চেয়ে গোপন প্রকোষ্ট সর্বোত্তম।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর আলোকে শরীয়ত এ মতেই ব্যক্ত করে যে, মহিলাগণ জামায়াতের
জন্য মসজিদে যাবে না। (ফায়জুল বারী শরহে বুখারী ২য়
জিলদ, পৃষ্ঠা-৩২২, বযলুল মাযহুদ শরহে
আবু দাউদ)
৩. ইমাম হযরত তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
মহিলাদের ইসলামের প্রথম যুগে জামায়াতে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করার কারণ হলো
বেদ্বীনদের সম্মুখে মুসলমানদের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি করা। হযরত আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সে যুগ ফিৎনা ফাসাদ
থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা একেবারেই বিপরীত। বেদায়ের লেখক বলেন,
যুবতী মহিলাদের (পাঁচ ওয়াক্তসহ) জুময়া, ঈদাইন ইত্যাদিতে
যোগদান করার অনুমতি নেই, কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, (হে মহিলাগণ) তোমরা
ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক। এ ছাড়াও মহিলাদের
ঘর হতে বের হওয়ার মধ্যে ফিৎনার আশঙ্কা
রয়েছে। (মায়ারিফে মাদানিয়াহ, শরহে তিরমিযী ৮ম
জিলদ, পৃষ্ঠা-১০৮)
৪. ইমাম অথবা উনার প্রতিনিধির জন্য জরুরী যেন
মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে আসতে নিষেধ করে। হযরত মাযহার রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন, যদিও হাদীছ শরীফ দ্বারা মহিলাদের (প্রথম যুগে) মসজিদে যাওয়া
প্রমাণিত কিন্তু আমাদের সময়ে তা মাকরূহ তাহরীমী, (কেননা) যুবতী ও
বৃদ্ধা মহিলাদের যে কোন নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ
করেছেন। (সুনানে নাসাই শরহে ইমামুস সুয়ুতী ২য় জিলদ,
পৃষ্ঠা- ২৮২, মিরকাত শরহে মিশকাত ৩য় জিলদ, পৃষ্ঠা- ৫৭৬৭)
৫. বর্তমান সময়ে মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে
যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী, সময়ের পরিবর্তনের কারণে। মহিলাদের সর্ব অবস্থায়
পর্দায় (ঘরে) থাকা সর্বোত্তম। (আশয়্যাতুল লুময়াত
শরহে মিশকাত ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৬২, মুযাহিরে হক্ব,
লুমায়াত শরহে মিশকাত)
৬. জুমহুর উলামায়ে কিরামদের নিকট যুবতী মহিলাদের
যেমনিভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ, তদ্রূপ জুময়া ও
ঈদাইনে ও নিষিদ্ধ, কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, তোমরা মহিলাগণ ঘরের
মধ্যে আবদ্ধ থাক। শুধু তাই নয়, তাদের বের হওয়ার মধ্যে
ফিৎনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই উলামায়ে মুতাআখখেরীনগণের ফতওয়া হলো মহিলাদের জামায়াতের
জন্য মসজিদে যাওয়া নাযায়েজ (হোক যুবতী অথবা বৃদ্ধা) (দরসে তিরমিযী ২য়
জিলদ, পৃষ্ঠা-৩২১, মায়ারিফে সুনান ৪র্থ জিলদ,
পৃষ্ঠা-৪৪৫)
৭. যুবতী মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। উলামায়ে
মুতাআখখেরীনগণের ফতওয়া হলো বৃদ্ধাদেরও যুবতী মহিলাদের ন্যায় মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ
যে কোন নামাযেই হোক না কেন। (আওযাযুল মাসালিক
শরহে মুয়াত্বায়ে মালিক ৪র্থ জিলদ, পৃষ্ঠা-১০৬, আল বুরহান, নাইলুল মায়ারিব,
শরহুল কবীর, আত্তাওশীহ)
৮. প্রথমোক্ত হাদীছদ্বয় দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে,
মহিলাদের মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম। (কেননা) মহিলাদের
(যুবতী) জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। আর উলামায়ে
মুতাআখখেরীনদের ফতওয়া হলো বৃদ্ধাদের জন্যও রাত্রে হোক অথবা দিনে মসজিদে যাওয়া
মাকরূহ তাহরীমী। (ইলাউস সুনান ৪র্থ
জিলদ, পৃষ্ঠা-২৪১, মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ)
৯. মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে প্রশ্ন করা
হলে তিনি বলেন, যুবতী মহিলাগণ কোন নামাযেই তা যে কোন সময়েই হোক না কেন বের
হতে পারবে না। (অর্থাৎ মসজিদে জামায়াতে উপস্থিত হতে পারবে না) আর বৃদ্ধা মহিলাগণ
ফযর ও ইশার নামায ব্যতীত কোন নামাযেই উপস্থিত হতে পারবে না। হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বৃদ্ধা মহিলাগণ
প্রত্যেক নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হতে পারবে। (কিন্তু উলামায়ে মুতাআখখেরীনদের
ফতওয়া হলো) বর্তমানে যুবতী হোক অথবা বৃদ্ধা উভয়ের জন্যই প্রত্যেক নামাযের জামায়াতে
উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী ফিৎনা প্রকাশ পাওয়ার কারণে।(তাতার খানিয়া ১ম
জিলদ, পৃষ্ঠা-৬২৮, খুলাছাতুল ফতওয়া ১ম জিলদ,
পৃষ্ঠা-১৫৫, বাদায়েউস সানায়ে ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৫৭)
১০. মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুময়া ও ঈদের নামাযের
জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী, যদিও প্রাপ্তা
বয়স্কা ও বৃদ্ধা হোক সময়ের পরিবর্তনের কারণে। তাই উলামায়ে মুতাআখখেরীনগণ ফতওয়া দেন
যে, মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী। (গায়াতুল আওতার ১ম
জিলদ, পৃষ্ঠা-২৬৩, দুররুল মুখতার ১ম জিলদ,
পৃষ্ঠা-৩৮৩, তাহতাবী, শামী, রদ্দুল মোহতার ১ম
জিলদ, পৃষ্ঠা-৫২৯, শরহে তানবীর)
১১. যুবতী মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া
মাকরূহ তাহরীমী, বৃদ্ধাদের কোন নিষেধ নেই। কিন্তু বর্তমানে পরবর্তী আলেমদের
ফতওয়া মুতাবিক যুবতী ও বৃদ্ধা উভয়ের জন্য যে কোন নামাযে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ
তাহরীমী।(আইনী শরহে হেদায়া ১ম জিলদ,
পৃষ্ঠা-৭৩৯, হেদায়া মায়াদ দেরায়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১২৬, মাবসূত লিসসারাখসী
২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৪১, ফতহুল কাদীর ১ম জিলদ,
পৃষ্ঠা-৩১৭, আলমগীরী, নেহায়া, এনায়া, কিফাইয়া ১ম জিলদ,
পৃষ্ঠা-৩১৭, নূরুল হেদায়া ১মজিলদ, পৃষ্ঠা-১০১)
১২. প্রাপ্তা বয়স্কা মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে
যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী এবং মুতাআখখেরীনদের মত হলো বৃদ্ধাদেরও যে কোন সময় যে কোন
নামাযে উপস্থিত হওয়া নিষেধ। (আইনুল হেদায়া ১ম
জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৫৮, কাফী, তাবয়ীন, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১ম
জিলদ, পৃষ্ঠা-১৩২)
১৩. মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, মহিলাগণ তোমরা ঘরের
মধ্যে আবদ্ধ থাক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহিলাদের মসজিদে
নামায পড়ার চেয়ে ঘরের বারান্দায় নামায পড়া উত্তম এবং ঘরের বারান্দায় নামায পড়ার
চেয়ে ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠে নামায পড়া সর্বোত্তম। তাই মহিলাগণ জামায়াতে উপস্থিত হবে
না, প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা, রাত্রে হোক অথবা
দিনে, কারণ সাধারণতঃ তাদের বের হওয়া ফিৎনার থেকে নিরাপদ নয়। তাই
পরবর্তি ফকীহদের ফতওয়া হলো প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা প্রত্যেক নামাযে উপস্থিত
হওয়াই মাকরূহ তাহরীমী। (বাহরুর রায়েক শরহে
কানজুদ দাক্বায়েক্ব ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৫৮, মাদানুল হাকায়েক ১ম
জিলদ, পৃষ্ঠা-১৪৩, আহসানুল মাসায়েল পৃষ্ঠা-৩৮,
মিনহাতুল খালিক, আল মাজমাউল আনহুর)
১৪. প্রাপ্তা বয়স্কা মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া,
মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা একমত।
মতবিরোধ শুধুমাত্র বৃদ্ধাদের বেলায়, ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বৃদ্ধা মহিলাগণ যোহর,
আছর ও জুময়ায় উপস্থিত হতে পারবে না, সাহেবাইন বলেন সকল
নামাযেই উপস্থিত হতে পারবে। কিন্তু মুতাআখখেরীন ফকীহগণ এর বিপরীত মত প্রকাশ করেন
অর্থাৎ প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়াই
মাকরূহ তাহরীমী। নহরুল ফায়েক কিতাবে উল্লেখ করা হয়, মুতাআখখেরীনদের উক্ত
মত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকেই নেওয়া হয়। (শরহে বেকায়া ১ম জিলদ,
পৃষ্ঠা-১০৮, শরহে সেকায়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৮৭, নহরুল ফায়েক।)
১৫. প্রাপ্তা বয়স্কা মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে
আসা মাকরূহ তাহরীমী। ফিৎনার আশঙ্কায়।
বর্তমান জামানায় ফাসেকী প্রকাশ পাওয়ার কারণে উলামায়ে মুতাআখখেরীনগণ ফতওয়া দেন যে,
প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা উভয়ের জন্য যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত
হওয়া মাকরূহ তাহরীমী।(আল জাওহারাতুন
নাইয়্যারাহ পৃষ্ঠা-৭৮, মারাকিউল ফালাহ পৃষ্ঠা-২০৫,মুহীত্ব, কুদূরী পৃষ্ঠা-৩৬)
১৬. (আলোচিত) উপরোক্ত
কারণে পরবর্তী ফকীহগণ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের পাঁচ
ওয়াক্ত, জুময়া, ঈদসহ যে কোন নামাযের
জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী। এ ফতওয়া সকল স্থানের
জন্যই প্রযোজ্য অর্থাৎ চাই হেরেম শরীফ-এ হোক অথবা মসজিদে নববীতে। হিন্দুস্থানে হোক
অথবা আরব দেশে সকল স্থানেই মাকরূহ তাহরীমী।(ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ ১ম
জিলদ, পৃষ্ঠা-১৭৩, ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ পৃষ্ঠা-৩৫,
তরীকুল ইসলাম ৭ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৩)
১৭. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ
তাহরীমী।সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় মহিলাদের মসজিদে আসা এবং
পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। এর প্রতি দুররুল
মুখতার কিতাবে ইঙ্গিত রয়েছে। (আযীযুল ফতওয়া ১ম
জিলদ, পৃষ্ঠা-২১৩, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ
৩য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৯, মাশারিকুল আনওয়ার
পৃষ্ঠা-১৩৭, ইমদাদুল আহকাম ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৪২৫)
১৮. (প্রাপ্তা বয়স্কা)
মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। বৃদ্ধা মহিলাদের
রাত্রে হলেও জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী।(আহসানুল ফতওয়া ৩য়
জিলদ, পৃষ্ঠা-২৮৩, কিফায়াতুল মুফতী ৩য় জিলদ,
পৃষ্ঠা-২৪৪, বেহেস্তী জিওর ৭ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২৯)
১৯. বর্তমান যামানার ফতওয়া হলো মহিলাদের জামায়াতের
জন্য মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ, যদিও বৃদ্ধা হোক না কেন।
রাত্রে হোক অথবা দিনে (প্রত্যেক অবস্থায়ই) ফিৎনার আশঙ্কায় মাকরূহ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে মাহমূদিয়াহ্
২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-২৩৯)
সুতরাং উপরোক্ত নির্ভযোগ্য, অকাট্য ও বিস্তারিত
আলোচনা দ্বারা এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, (১) কুরআন শরীফ,
হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের বাইরে কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। (২) প্রথম
যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল তা’লীম গ্রহণ করা। (৩)
মহিলাদের ঘরে নামায পড়ায় অধিক ফযীলত। (৪) হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম
তিনি মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি তা
পূর্ণ সমর্থন করেন। (৫) পরবর্তিতে হানাফী মাযহাবের ইমাম, মুজতাহিদ
রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বিনা শর্তে মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া
মাকরূহ তাহরীমী ফতওয়া দেন এবং এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কাজেই মহান
আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলকে হক্ব মত ও হক্ব পথে কায়েম রাখেন এবং উক্ত ফতওয়া
মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ মারেফত ও মহব্বত হাছিল করার
তৌফিক দান করেন। (আমিন)