আজকাল কোন কোন স্থানে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়তে দেখা যায়। বিশেষ করে রমাদ্বান শরীফ মাসে বেশী দেখা যায়। অথচ আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া অনুযায়ী তাহাজ্জুদ নামায ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ। চাই রমাদ্বান শরীফ মাসে হোক অথবা গায়রে রমাদ্বান শরীফ মাসে হোক, এর উপর মুসলমানদের ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়, “রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত বিতর নামায ও নফল নামায জামায়াতে পড়ো না কেননা ঘোষণা দিয়ে নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী এবং এটার উপর মুসলমানদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”(আলজাওহারাতুন নাইয়্যারাহ ,পৃষ্ঠা-১২৮)
কেউ কেউ বলে থাকে উপরোক্ত ইবারতে এবং আরো অনেক ইবারতে রমাদ্বান শরীফ মাস ছাড়া নফল নামায জামায়াতে পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই কেউ যদি তাহাজ্জুদ নামায রমাদ্বান শরীফ মাসে জামায়াতে পড়ে, তবে মাকরূহ হবে কেন?
এর জবাব হলো, যারা এ কথা বলে থাকে, তারা উপরোক্ত কিতাবের ইবারতের ব্যাখ্যা বুঝতে সক্ষম হননি। কারণ রমাদ্বান শরীফ মাসে যে নফল নামায জামায়াতে পড়া জায়িয বলা হয়েছে, তা হলো তারাবীহ নামায।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, “যে সকল ইবারতে রমাদ্বান শরীফ মাসেনফল নামায মাকরূহ নয় বলে উল্লেখ আছে, উক্ত নফল নামাযের দ্বারা তারাবীহ নামাযকেই বুঝানো হয়েছে।” (আহসানুল ফতওয়া, ৩য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৭৪)
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়, “এ কারণেই হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা রমাদ্বান শরীফ মাসে তারাবীহ নামায ব্যতীত অন্য কোন নফল নামায জামায়াতে আদায় করেননি। বরং রমাদ্বান শরীফ মাসে তারাবীহ ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায নাজায়িয হওয়ার উপরই সকলেই একমত।”
এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, তারাবীহ নামায তো নফল নয় ? এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে, সকল নামাযই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য দু’ভাগে বিভক্ত ছিল। (১) ফরয নামায (২) নফল নামায। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কোন ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা,সুন্নতে যায়িদা,মুস্তাহাব নামায ছিল না। ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজতিহাদ করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নফল নামাযগুলো তাক্বীদ অনুযায়ী আমাদের জন্য কোনটা ওয়াজিব যেমনঃ বিতর ও দুই ঈদের নামায, কোনটা সুন্নতে মুয়াক্কাদা যেমনঃ তারাবীহ, ফযরের পূর্বের, যোহরের পূর্বের ও পরের, মাগরিবের ও ইশার পরের সুন্নত নামাযসমূহ। কোনটা সুন্নতে যায়িদা যেমনঃ আছরের পূর্বের এবং ইশার পূর্বের চার রাকায়াত সুন্নত নামায। কোনটা মুস্তাহাব যেমনঃ আওয়াবীন, চাশত, শবে বরাত, শবে ক্বদর ইত্যাদি ভাগে ভাগ করেছেন। তাই একমাত্র ফরয নামায ব্যতীত সকল নামাযগুলোই মূলতঃ নফল নামাযের অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু আহকামের দিক দিয়ে কোনট ওয়াজিব, মুয়াক্কাদা, যায়িদা, মুস্তাহাবের অন্তর্ভূক্ত।
স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তারাবীহ নামাযকে নফল বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ পাকতিনি রমাদ্বান শরীফ-এর রোযাকে ফরয করেছেন এবং ক্বিয়ামুল লাইলকে (অর্থাৎ তারাবীহ নামাযকে) নফল (সুন্নতে মুয়াক্কাদা) করেছেন।” (বায়হাক্বী শরীফ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, রমাদ্বান শরীফ মাসে যে নফল নামায জামায়াতে পড়ার আদেশ রয়েছে, তা হলো তারাবীহ নামায। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত যে, ক্বিয়ামুল লাইল অর্থ তারাবীহ নামায। যারা ক্বিয়ামুল লাইলকে তাহাজ্জুদ নামায বলে থাকেন, তাদের কথা শুদ্ধ নয়। কেননা কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত মুহাদ্দিছীনদের অধিকাংশই “ক্বিয়ামুল লাইল” দ্বারা তারাবীহকে বুঝিয়েছেন।” (হেদায়া, ফতহুল ক্বাদির, মাবছূত, বাদায়ে, আহসানুল ফতওয়া)
সুতরাং রমাদ্বান শরীফ মাসে যে নফল নামায জামায়াতে পড়া জায়িয বলা হয়, তাহলো তারাবীহ নামায। সুতরাং আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো রমাদ্বান শরীফ মাসে তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্বায়ায়ে ক্বিফায়া, বিতর নামায রমাদ্বান শরীফ মাসে জামায়াতে পড়া মুস্তাহাব, রমাদ্বান শরীফ-এর বাইরে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তানযীহী এবং সালাতুল কুসূফ (সূর্য গ্রহণ) সালাতুল ইস্তেস্কা (বৃষ্টির) নামায রমাদ্বান শরীফ মাসে হোক অথবা গায়রে রমাদ্বান শরীফ-এ হোক জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে যায়িদা।
উল্লেখিত নফল নামাযগুলো জামায়াতে আদায় জায়িয ও শরীয়ত সম্মত বরং সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং তাহাজ্জুদ নামায, চাশত, আওয়াবীন, শবে ক্বদর ও শবে বরাত ইত্যাদি সকল নফল নামাযসমূহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ছেন বলে কোন প্রমাণ কেউ পেশ করতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, হযরত শায়খুল কাসেম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা যদি নফল নামায জামায়াতে পড়া মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ হতো, তবে অবশ্যই যারা রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে থাকে, তারা ফযীলত অর্জনের লক্ষ্যে একত্রিত হয়ে জামায়াতে আদায় করতেন। অথচ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়েছেন বলে দেখা যায় না।” (মাবছূত সারাখসী, মাছাবাতা বিছসুন্নাহ)
সুতরাং তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ।
অনেকে মনে করেন যে, রমাদ্বান শরীফ মাসে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করে অনেক ফযীলত হাছিল করা যাবে, মূলতঃ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করলে ফযীলত তো পাওয়া যাবেই না বরং সে গুনাহগার হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেভাবে ইবাদত করার জন্য বলেছেন, তার বিপরীত করে কিভাবে ফযীলতের আশা করা যায়? যেমন কেউ যদি মুসাফির অবস্থায় কছর নামায দু’রাকায়াতের পরিবর্তে বেশী ফযীলত পাওয়ার জন্য চার রাকায়াত আদায় করে, তবে সে কি ফযীলত অর্জন করতে পারবে? কখনো নয় বরং তার কবীরা গুণাহ হবে এবং তার উক্ত নামায দোহরানো ওয়াজিব হবে। কেননা সে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুমের খিলাফ কাজ করলো। তেমনিভাবে তাজাজ্জুদ তথা নফল নামায যেখানে হানাফী মাযহাব মুতাবিক ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ সেখানে এরূপ একটি বিদায়াত কাজ করে আমরা কি করে ফযীলতের আশা করতে পারি? অথচ এরূপ বিদায়াত সম্পর্কেই হাদীছ শরীফ-এ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “প্রত্যেক বিদায়াতই গুমরাহী এবং প্রত্যেক গুমরাই জাহান্নামী।”(মিশকাত শরীফ)
এখন কেউ কেউ বলতে পারেন, অতীতে বা বর্তমানে অনেক পীর ছাহেব, মুফতী ছাহেব, মুফাচ্ছির ছাহেব, মুহাদ্দিছ ছাহেব, মাওলানা ছাহেব, হাফিয ছাহেব, ক্বারী ছাহেব, ওয়ায়েজ, ইসলামী চিন্তাবিদ, ইসলামী রাজনৈতিক নেতা, আলেম, জালেম, সূফী, দরবেশ প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ তাহাজ্জুদের নামায জামায়াতে পড়েছেন বা পড়তে বলেছেন, পড়েন বা পড়তে বলেন, তাদের সম্পর্কে ফায়সালা কি? মূলতঃ এর জবাবে সংক্ষেপে এতটুকু বললেই চলে যে, ইসলামী শরীয়ত কোন ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোককে দলীল বা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে না, যতক্ষণ পর্যন্তনা সে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোক কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের উপর কায়েম না থাকবে। অর্থাৎ যে কেউ ইসলামের খিদমত করলেই যে সে ইসলামের আদর্শ বা দলীল বলে গণ্য হবে, তা নয়। যেখানে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া অসংখ্য, অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদীল্লার ভিত্তিতে মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ প্রমাণিত। সেখানে বিনা দলীলে এটাকে জায়িয বলা গুমরাহী ছাড়া কিছুই নয়। সুতরাং মোটকথা হলো হানাফী মাযহাবের ফতওয়া মুতাবিক তারাবীহ, এস্তেস্কা, কুসূফ এর নামায জামায়াতে পড়া জায়িয। আর তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ, যদি ইমাম ব্যতীত চারজন মুক্তাদী হয়, ঘোষণা দিয়ে পড়ুক আর বিনা ঘোষণায় পড়ুক।
যে সকল কিতাবে নফল নামায ও তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ বলে উল্লেখ রয়েছে, নিম্নে ফতওয়া ও ফিক্বাহের কিতাবসমূহ হতে তার নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীল-আদীল্লা পেশ করা হলোঃ
১. রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত বিতর নামায ও নফল নামায জামায়াতে পড়ামাকরূহ তাহরীমী, যদি ইমাম ব্যতীত চারজন মুক্তাদী ইক্তেদা করে এবং ঘোষণা দিয়ে করা হয়। আর যদি একজন অথবা দুইজন ইক্তেদা করে তবে কেউ কেউ বলেন মাকরূহ, কেউ কেউ বলেন মাকরূহ নয়। (অবশ্য চারজন মুক্তাদী হলে সর্বসম্মতিক্রমেই মাকরূহ তাহরীমী) (রদ্দুল মুহতার, ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৬৬৩,দুররুল মুখতার, শামী, ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৭৪১, গায়াতুল আওতার ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২৫৭, আল কুহেস্তানী)
[কেউ কেউ বলতে পারেন যে, এখানে রমাদ্বান শরীফ মাসে নফল নামায জামায়াতে পড়তে নিষেধ করা হয়নি? এখানে উল্লেখ্য যে, আমরা পূর্বেই অত্র ফতওয়ার ভূমিকায় দলীল সহকারে প্রমাণ করেছি যে, যে সকল কিতাবসমূহে রমাদ্বান শরীফ মাসে নফল নামায জামায়াতে পড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে, তা হলো তারাবীহ নামায। সুতরাং তাদের মূল বক্তব্য হলো, তারাবীহ নামায ব্যতীত রমাদ্বান শরীফ মাসেও কোন নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
মোটকথা আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো তারাবীহ নামায রমাদ্বান শরীফ মাসে জামায়াতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া এবং বিতর রমাদ্বান শরীফ মাসে জামায়াতে পড়া মুস্তাহাব, গায়রে রমাদ্বান শরীফ-এ জামায়াতে পড়া মাকরূহ তানযীহী এবং এস্তেস্কা ও কুসূফের (সূর্য গ্রহণ) নামায রমাদ্বান শরীফ মাসে বা গায়রে রমাদ্বান শরীফ-এ সব সময় জামায়াতের সাথে পড়া সুন্নতে যায়িদার অন্তর্ভূক্ত। এটা ব্যতীত সকল নফল নামায যেমনঃ তাহাজ্জুদের নামায, শবে ক্বদর, শবে বরাত, খূসুফ (চন্দ্র গ্রহণ) ইত্যাদি। ঘোষণা দিয়ে ইমাম ব্যতীত চারজন মুসল্লীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ। চাই রমাদ্বান শরীফ মাসে হোক অথবা রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে হোক। এর উপর হানাফী মাযহাবের সকল ইমাম, মুজতাহিদগণ একমত।]
২. নিশ্চয়ই ঘোষণা দিয়ে নফল নামায জামায়াতের সাথে পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
সদরুশ শহীদ উনার কিতাবুল আসলে উল্লেখ করেন যে, যদি আযান ও ইক্বামত ব্যতীত মসজিদের কোন এক কোণায় নফল নামায জামায়াতে আদায় করে, তবে মাকরূহ হবে না। এর ব্যখ্যায় হযরত শামসুল আইম্মা (হালওয়ালী) রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যদি ইমাম ব্যতীত তিনজন মুক্তাদী হয়, তবে সকলের মতে মাকরূহ হবে না। আর চারজনের বেলায় মাশায়িখদের মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। তবে অধিক সহীহ মত হলো ইমাম ব্যতীত চারজন মুক্তাদী হলে মাকরূহ তাহরীমী হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৮৩, খোলাসাতুল ফতওয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৫৪, বাহরুর রায়েক ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৪৫, মিনহাতুল খালিক্ব ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৪৫, শরহে মুনিয়া)
৩. কিতাবুল আসলে উল্লেখ রয়েছে, তারাবীহ, কুসূফ (সূর্য গ্রহণ)এর নামায ব্যতীত নফল নামায জামায়াতে পড়োনা। (মাবসুত লিস সারাখসী ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৭, কিতাবুল আসল ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৭১)
৪. রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত (অর্থাৎ তারাবীহ নামায ব্যতীত) নফল নামায জামায়াতের সাথে পড়োনা, হযরত শামসূল আইম্মা সারাখসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ইই নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী, যখন ঘোষণা দিয়ে পড়া হবে। সুতরাং যদি ইমামের সাথে একজন অথবা দু’জন ইক্তেদা করে, তবে মাকরূহ হবেনা, তিনজন ইক্তেদা করার মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে, তবে চারজন ইক্তেদা করলে সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৬৩৬)
৫. তোমরা তারাবীহ, কুসূফ (সূর্য গ্রহণ) এর নামায ব্যতীত কোন নফল নামায জামায়াতে পড়োনা। (বাদায়ে উচ্ছানায়ে ফি তারতীবিশ শারায়ে ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২৮০)
৬. তারাবীহ, কুসূফ (সূর্য গ্রহণ) এর নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায জামায়াতে আদায় করা কি মাকরূহ তাহরীমী? মোসান্নেফ বলেন, হ্যাঁ। (অর্থাৎ মাকরূহ তাহরীমী) (কিতাবুল আসল মারুফ বিল মাবসূত ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৪৩, ফতহুল ক্বাদীর ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৩৯)
৭. তারাবীহ ব্যতীত নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত বিতর নামায জামায়াতে না পড়াই উত্তম।
হযরত শামসুল আইম্মা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ। সুতরাং যদি একজন অথবা দু’জন ইমামের সাথে ইক্তেদা করে, তবে মাকরূহ হবে না। যখন চারজন ইক্তেদা করবে, তখন সকলের নিকটে মাকরূহ তাহরীমী। (হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ পৃষ্ঠা-২৫৬)
৮. রমাদ্বান শরীফ মাসের বিতর ও তারাবীহ ব্যতীত কোন নফল নামায জামায়াতে পড়োনা, কেননা ওটা মাকরূহ তাহরীমী যদি ঘোষণা দিয়ে পড়া হয়। এটার উপর সকল মুসলমান একমত। (আল জাওহারাতুন নাইয়্যারা পৃষ্ঠা-১২৮)
৯. রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত (অর্থাৎ তারাবীহ ব্যতীত) নফল নামায জামায়াতে পড়োনা। হযরত শামসুল আইম্মা সারাখসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,নিশ্চয়ই নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। সুতরাং যদি ইমামের সাথে একজন অথবা দু’জন ইক্তেদা করে, তবে মাকরূহ হবে না। যখন তিনজন ইক্তেদা করবে, তখন মাকরূহ হওয়ার মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আর যদি চারজন ইক্তেদা করে, তবে সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ তাহরীমী হবে।(খোলাসাতুল ফতওয়া মায়া মাজমূয়াতুল ফতওয়া ১ম জিলদ,পৃষ্ঠা-১৫৩,আইনী শরহে হেদায়া ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৮৩৭, শরহে নেক্বায়া লি মোল্লা আলী ক্বারী ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২৪২, শরহে ইলিয়াস)
১০. ইমাম হযরত হালাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, জেনে রাখ ! নিশ্চয়ই নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী, তবে তারাবীহ, সূর্য গ্রহণ (কুসূফ) ও ইস্তেস্কার (বৃষ্টির) নামায ব্যতীত। সুতরাং সালাতুল রাগায়িব (অর্থাৎ রজব মাসের প্রথম জুময়ার রাত্রের নামায),
শবে বরাতের রাত্রের নফল নামায এবং শবে ক্বদরের রাত্রের নফল নামায জামায়াতে পড়াও মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ। (আশবাহ ওয়ান নাযায়ের ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২১৯, শরহুল মুনিয়া)
১১. কেউ তারাবীহ আদায় করার পর যদি পুনরায় তারাবীহ নামায আদায় করতে চায়, তবে জামায়াতে না পড়ে একাকী পড়বে, কেননা পুনরায় সে যেই নামায পড়বে সেটা তার জন্য মূলতঃ নফল হবে, আর নফল নামায সাধারণতঃ জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১১৬, তাতার খানিয়া, বাদায়েউচ্ছানায়ে ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২৯০, বাহরুর রায়েক ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৬৮)
১২. তারাবীহ, কুসূফ ও ইস্তেস্কার নামায ব্যতীত কোন নফল নামায জামায়াতে পড়োনা। (তাতার খানিয়া ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৮৫)
১৩. ইমাম হযরত তাহতাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায জামায়াতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তারাবীহ জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। আর রমাদ্বান শরীফ মাসে বিতর নামায জামায়াতে পড়া মুস্তাহাব। সুতরাং রমাদ্বান শরীফ মাসের তারাবীহ ও বিতর ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। (তাহতাবী পৃষ্ঠা-১৫৬, কিতাবুল ফিক্বাহ ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৩৭)
১৪. হযরত শায়খ হালাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী, তবে তারাবীহ (কুসূফ ও ইস্তেস্কা) ব্যতীত। (আশাবাহ ওয়ান নাযায়ের ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২১৯)
১৫. নিশ্চয়ই নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী।(ফতওয়ায়ে বায্যাযিয়া ৪র্থ জিলদ, পৃষ্ঠা-২৯, খোলাসাতুল ফতওয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৬৩, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১২৮)
১৬. নিশ্চয়ই নফল নামায জামায়াতে পড়া ভিত্তিহীন, আর এরূপ ভিত্তিহীন জামায়াত আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী হতে খালী নয় (অর্থাৎ মাকরূহ তাহরীমী)। সুতরাং নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। এটা স্পষ্ট যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুন্নত ও নফল নামায এমনকি বিতরও নিজ ঘরে একাকী পড়তেন, এটার প্রমাণ সুন্নত ও বিতর অধ্যায়ে উল্লিখিত হাদীছ শরীফ সমূহে রয়েছে। (এলাউস সুনান ৭ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৭৮)
১৭. নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা এটা সুন্নতে মুয়াক্কাদার বিপরীত এবং হযরত খুলাফা রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম, হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমলেরও বিপরীত। কেননা উনারা কখনও নফল নামায জামায়াতে পড়েননি। (এলাউস সুনান ৭ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৭৮)
১৮.তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ, কেননা ওটা নফলের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ লোকদেরকে ডেকে (ঘোষণা দিয়ে) তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। আর ঘোষণা ব্যতীত যদি উর্দ্ধে তিনজন মুক্তাদী তাহাজ্জুদ আদায়কারীর পিছনে ঘটনাক্রমে ইক্তেদা করে ফেলে, তবে মাকরূহ হবে না। (চারজন হলে মাকরূহ তাহরীমী হবে) আর তাহাজ্জুদ নামায (ঘোষণা দিয়ে) জামায়াতের সাথে আদায় করা বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ।(হাশিয়ায়ে শরহে বেকায়া লি ফাজেল চলপী)
১৯. ঘোষণা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী, তবে ঘোষণা ব্যতীত ইমামের সাথে যদি তিনজন তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ে, তবে মাকরূহ হবে না। আর ঘোষণা দেওয়ার অর্থ হলো ইমামের সাথে চার মুসল্লী ইক্তেদা করা। (যেটা সম্পূর্ণই মাকরূহ তাহরীমী) অনুরূপ দুরার কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে। (ফতওয়ায়ে সা’দিয়াহ পৃষ্ঠা-৭২)
২০. হযরত শায়খ আবুল কাসেম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি মিসরের ওলামায়ে মুতাআখখেরীন উনাদের অন্তর্ভূক্ত তিনি বলেন, নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা এটা যদি মুস্তাহাব হতো এবং পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের ন্যায় ফযীলতপূর্ণ হতো, তবে যারা রাত্রে তাহাজ্জুদ নামায পড়েন। তারা ফযীলত অর্জনের লক্ষ্যে জামায়াতে তাহাজ্জুদ নামায পড়তেন। সুতরাং যেহেতু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে এরূপ আমল (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া) পরিলক্ষিত হয়না, সেহেতু বুঝা গেল যে, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ার মধ্যে কোনই ফযীলত নেই (বরং মাকরূহ তাহরীমী)। (মাবছূত লিস সারাখসী ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-১৪৪, মাছাবাতা বিচ্ছুন্নাহ পৃষ্ঠা-৮৮)
২১. রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত বিতর নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ। রমলী বলেন, শুধুমাত্র রমাদ্বান শরীফ মাসেই বিতর নামায জামায়াতে পড়া যাবে। আর নিশ্চয়ই (রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত) বিতর নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তানযীহীর অন্তর্ভূক্ত। (বাহরুর রায়েক ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৪৫, মিনহাতুল খালিক, আইনী শরহে হেদায়া, খোলাসাতুল ফতওয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৫৩, মারাকিউল ফালাহ পৃষ্ঠা-২৫৬)
২২. বিতর নামায রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত জামায়াতে পড়া যাবে না। এটার উপর সমস্ত মুসলমান একমত। (হেদায়া মায়াদ্দেরায়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৫১, ফতহুল ক্বাদীর ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৪০৯, শরহে ইলিয়াস, শরহুন নেক্বায়া, কেফায়া, আহসানুল মাসায়িল পৃষ্ঠা-৪৫, কূদুরী পৃষ্ঠা-৫২, এলমুল ফিক্বাহ ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-২২৩)
২৩. আফসুস শত আফসুস এজন্য যে, যে সকল বিদয়াতের চিহ্ন পর্যন্ত অন্যান্য সিলসিলায় দেখা যায়না, তা এই নকশবন্দীয়া তরীকার কারো কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে, এলাকার আনাচে-কানাচে হতে লোক একত্রিত হয়ে বড় জামায়াতের সাথে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে থাকে, যেটা মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভূক্ত।(মাকতুবাতে ইমাম রাব্বানী ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৪৪, ফতওয়ায়ে সিরাজিয়া, গিয়াছিয়া, শাফিয়াহ, নেহায়া, কিতাবুজজিয়া, শরহে শামায়েল)
২৪. নফল নামায জামায়াতে পড়া উচিৎ নয়, কেননা সহীহ মত এটাই যে, নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। আর ঘোষণা দেওয়ার অর্থ হলো চারজন মুসল্লী জামায়াতে শরীক হওয়া, এটা সর্বসম্মতিক্রমেই মাকরূহ তাহরীমী। আর ইমাম ব্যতীত তিনজন মুক্তাদী হলে মাকরূহ হওয়ার মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। একজন অথবা দু’জন মুক্তাদী হলে মাকরূহ হবে না।(ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২৪১)
২৫. তাহাজ্জুদ নামায ঘোষণা দিয়ে (অর্থাৎ ইমাম ব্যতীত চার মুক্তাদীসহ) জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। (আযীযুল ফতওয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২৪০)
২৬. প্রশ্নঃ রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত নফল এবং তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া জায়িয আছে কি?
উত্তরঃ তাহাজ্জুদ নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসের তিন রাত্র যে নামায জামায়াতের সাথে আদায় করেছেন, তা হলো তারাবীহ নামায, আল্লামা শামীর বর্ণনায়ও এটাই প্রমাণিত হয়। (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ৪র্থ জিলদ, পৃষ্ঠা-২২০)
২৭. পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে ঘোষণা দিয়ে বিতর ও তারাবীহ জামায়াতে পড়া জায়িয, শরীয়তসম্মত ও সুন্নত এবং অন্যান্য নফল নামাযসমূহ তারাবীহ (বিতর, ইস্তেস্কা, কুসূফ) ব্যতীত রমাদ্বান শরীফ মাসেও ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ৪র্থ জিলদ, পৃষ্ঠা-২২৩)
২৮. প্রশ্নঃ শবে ক্বদর, শবে মিরাজ, শবে বরাত ইত্যাদি রাতসমূহে মসজিদে একত্রিত হয়ে নফল নামায ও ওজীফা পাঠ করা কি?
উত্তরঃ ঐ রাতসমূহে জাগ্রত থাকা মুস্তাহাব। এই রাতসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট বহু বরকতময়, ঐ রাতসমূহে যত বেশী ইবাদত করা যাবে, ততই ফযীলত অর্জন করা যাবে। কিন্তু নফল নামায জামায়াতে পড়া উচিত নয়। কেননা এটা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও মাকরূহ তাহরীমী। (গুনিয়াতুল মুসল্লী ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৪১১, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ৪র্থ জিলদ, পৃষ্ঠা-২২৪, ফতওয়ায়ে মাহ্মূদিয়া ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-১৬০)
২৯. প্রশ্নঃ তারাবীহ নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায ঘোষণা ব্যতীত জামায়াতে পড়া জায়িয কিনা এবং কোন সংখ্যা শর্ত আছে কি?
উত্তরঃ দুররুল মুখতার কিতাবে আছে, রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত নফল নামায জামায়াতে পড়না, কেননা নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। যদি চারজন মুক্তাদী জামায়াতে শরীক হয়। উল্লেখিত কিতাবের ইবারত হতে জানা গেল যে, প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় যদি মুক্তাদী একজন অথবা দু’জন হয়, তবে মাকরূহ হবে না। আর যদি চারজন মুক্তাদী হয়, তবে মাকরূহ তাহরীমী হবে। (ইমদাদুল ফতওয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৮৫)
৩০. চারজন মুক্তাদীসহ নফল নামায জামায়াতে পড়া সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ তাহরীমী এবং তিনজন মুক্তাদী হলে মাকরূহ হওয়ার মধ্যে মতভেদ রয়েছে।(ইমদাদুল আহকাম ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৫১৯)
৩১. প্রশ্নঃ কোন কোন গ্রামে প্রচলিত রয়েছে যে, কোন কোন হাফিয ছাহেব তাহাজ্জুদ নামাজে একজন অপরজনকে কুরআন শরীফ শুনায় এবং দু’চারজন লোকও জামায়াতে শরীক হয় এবং একজন অপরজনের ঘরে গিয়ে ঘুম থেকে উঠায় এবং কোন কোন দিন বিনা ঘোষণায় সকলে মসজিদে একত্রিত হয়ে যায়। সুতরাং এরূপ জামায়াত জায়িয আছে কিনা?
উত্তরঃ নফল নামায চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে পড়া তাহাজ্জুদ হোক অথবা অন্যান্য নফল নামায হোক, তারাবীহ, কুসূফ, ইস্তেস্কা ব্যতীত আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক মাকরূহ তাহরীমী। চাই নিজে নিজে আসুক অথবা ডেকে আনা হোক। তবে তিন মুক্তাদী হলে মাকরূহ হওয়ার মধ্যে মতভেদ রয়েছে এবং দু’একজন হলে মাকরূহ হবে না। (ফতওয়ায়ে রশীদিয়া পৃষ্ঠা-২৯৯, ফতওয়ায়ে রহীমিয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৭৯)
৩২. প্রশ্নঃ নফল নামায জামায়াতে আদায় করা, বিশেষ করে রমাদ্বান শরীফ মাসে তাহাজ্জুদ এবং আওয়াবীন নামায জামায়াতে পড়া জায়িয বা নাজায়িয?
উত্তরঃ হাদীছ শরীফ দ্বারা যে সকল নফল নামায জামায়াতে পড়া প্রমাণিত রয়েছে, তা ব্যতীত অন্য নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। ফিক্বাহর কিতাবে লিখা রয়েছে, যদি ঘোষণা দিয়ে পড়া হয়, আর ঘোষণা দেওয়ার অর্থ হলো চারজন মুক্তাদী জামায়াতে শরীক হওয়া। সুতরাং কুসূফ (সূর্য গ্রহণ) তারাবীহ ও ইস্তেস্কার নামায জামায়াতে পড়া জায়িয (এবং হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত) এ ছাড়া অন্যান্য সকল নফল নামাজেই জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৭৯, ইলমুল ফিক্বাহ ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-২২৩)
৩৩. হানাফী মাযহাব মুতাবিক ইমাম ব্যতীত চারজন মুক্তাদী জামায়াতে শরীক হলে উক্ত জামায়াত সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ তাহরীমী হবে। আর যদি মুক্তাদী তিনজন হয়, তবে মাকরূহ হওয়ার মধ্যে মতভেদ আছে। দু’একজন মুক্তাদী হলে যদিও বিনা মাকরূহে জায়িয কিন্তু ওটার মধ্যে জামায়াতের ফযীলত ও সাওয়াব পাওয়া যাবে না। (আহসানুল ফতওয়া ৩য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৬৯)
৩৪. প্রশ্নঃ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা কি?
উত্তরঃ তাহাজ্জুদ নামায ঘোষণা দিয়ে (অর্থাৎ চারজন মুক্তাদীসহ) জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে মাহমুদীয়া ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-১৬০)
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা ও বিস্তারিত দলীল-আদিল্লার দ্বারা এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তাহাজ্জুদের নামায রমাদ্বান শরীফ মাসে বা গায়ের রমাদ্বান শরীফ মাসে, ঘোষণা দিয়ে হোক বা বিনা ঘোষণায় হোক ইমামসহ চারজন মুক্তাদী জামায়াতের সাথে আদায় করা, সম্পূর্ণ মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ার মধ্যে কোনই ফযীলত নেই। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, ইমাম মুজতাহিদ রমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা কেউ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়েছেন বলে কেউ প্রমাণ পেশ করতে পারবেনা। কাজেই কেউ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের দাবিদার হলে তাকে অবশ্যই উপরোক্ত ফতওয়া মেনে আমল করতে হবে, নয়তো দলীলের মাধ্যমে অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের মাধ্যমে খন্ডাতে হবে। তবে আমার বিশ্বাস যেহেতু নির্ভরযোগ্য কিতাবের মাধ্যমে বিস্তারিত দলীলের মাধ্যমে ফতওয়া পেশ করেছি। সুতরাং কারো দ্বারাই এই ফতওয়া খন্ডান সম্ভব হবে না, ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সহীহ ভাবে আমল করার তৌফিক দিন (আমিন)।