হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আবু আমির
আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে
আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত
শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি
ঘটেছে)। এতদশ্রবণে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা
উনার রহমতের দরজা আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনার জন্য
ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, সেও আপনার মত নাযাত (ফযীলত) লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
(আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর- শায়খ হাফিয আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা, মাওলূদুল কাবীর- লি-ইমাম হাফিয ইবনে হাযর মক্কী, দুররুল মুনাযযাম- লিল আল্লামা আবিল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইমাম জালালুদ্দনি সুয়ূতী, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি- মাওলানা সালামতুল্লাহ ছিদ্দীক্বী কানপুরী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী- বেশারতুল্লাহ মাদানীপুরী)
(আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর- শায়খ হাফিয আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা, মাওলূদুল কাবীর- লি-ইমাম হাফিয ইবনে হাযর মক্কী, দুররুল মুনাযযাম- লিল আল্লামা আবিল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইমাম জালালুদ্দনি সুয়ূতী, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি- মাওলানা সালামতুল্লাহ ছিদ্দীক্বী কানপুরী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী- বেশারতুল্লাহ মাদানীপুরী)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে,
তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং
আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা
তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত-সালাম)
দরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূল-এ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায়
উপস্থিত হলেন এবং (মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন: “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী
মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর- শায়খ হাফিয আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা, মাওলূদুল কাবীর- লি-ইমাম হাফিয ইবনে হাযর মক্কী, দুররুল মুনাযযাম- লিল আল্লামা আবিল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইমাম
জালালুদ্দনি সুয়ূতী, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল
মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি- মাওলানা সালামতুল্লাহ ছিদ্দীক্বী কানপুরী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী- বেশারতুল্লাহ মাদানীপুরী)
উপরে বর্ণিত হাদীছ শরীফ-দ্বয়েএ মীলাদ শরীফ
উনার সাথে ক্বিয়ামের বিষয়টি সম্পৃক্ত রয়েছে। কারণ আল্লাহ
পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন উক্ত মীলাদ শরীফ
উনার মজলিসে তাশরীফ নিলেন তখন সমবেত ছাহাবীগণ দাঁড়িয়ে
উনাকে সালাম পেশ করে অভ্যর্থনা জানিয়ে আসনে বসালেন।
হয়তবা কেউ বলতে পারে যে, ‘উক্ত হাদীছ শরীফদ্বয়ে তো ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে সালাম দেয়ার কথা উল্লেখ
নেই।’
হ্যাঁ, উক্ত হাদীছ শরীফ-এ
যেরূপ ক্বিয়াম করার কথা উল্লেখ নেই, তদ্রুপ ক্বিয়াম
করেননি একথাও তো উল্লেখ নেই। তবে বাস্তবতা ও অন্যান্য হাদীছ শরীফ প্রমাণ করে যে,
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উক্ত
মীলাদ শরীফ উনার মজলিসে ক্বিয়াম করেছেন। কারণ, বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে,“আখিরী রসুল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত মীলাদ শরীফ উনার মজলিসে স্বশরীরে উপস্থিত হলেন।”
আর এটা বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার আগমনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুমগণ উনার সম্মানার্থে ‘ক্বিয়াম’ করেছেন।
কারণ, অন্যান্য বহু হাদীছ
শরীফ প্রমাণ করে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মজলিসে উপস্থিত হতেন তখন
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনার সম্মানার্থে ‘ক্বিয়াম’ করতেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে বসে
আমাদেরকে নছীহত বা ওয়ায করছিলেন। যখন তিনি উঠলেন বা দাঁড়ালেন, আমরাও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ আমরা উনাকে দেখতে পাচ্ছিলাম। এমনকি উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম
উনাদের ঘরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়েই রইলাম।” (বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব, তা’লীকুছ ছবীহ)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে যে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যেতেন, তখন তিনি (হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়ের মুহব্বতে) দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তাঁর হাতে
বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত ফাতিমা
আলাইহাস সালাম উনার নিকট যেতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন।” (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত, মিরকাত, বযলুল মাজহুদ, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তা’লীকুছ ছবীহ, শরহুত ত্বীবী)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত মুহম্মদ বিন হিলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে,
“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘর হতে বের হতেন,
তখন আমরা দাঁড়িয়ে যেতাম এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি স্বীয় ঘরে প্রবেশ না করতেন (আমরা দাঁড়িয়ে থাকতাম)।”
এ হাদীছ শরীফখানা বাযযার বর্ণনা করেছেন, যার রাবী অত্যন্ত শক্তিশালী। (বাযযার, মাজমাউল যাওয়ায়েদ, ফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছার)
“বুখারী শরীফ” উনার ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ইরশাদুস সারী”
উনার ৯ম খণ্ড, ১৫৫ পৃষ্ঠায় ছাহীহ সনদে হযরত উসামা ইবনে শারীক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, “আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীম উনার জন্য দাঁড়িয়ে উনার হস্ত মুবারক চুম্বন দিলাম।”
যদি তাই হয়ে থাকে, তবে একথা কি করে বিশ্বাস করা যেতে পারে যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উক্ত মীলাদ শরীফ উনার মজলিসে স্বশরীরে
উপস্থিত হলেন অথচ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ক্বিয়াম
করেননি।
এখন কেউ কেউ এ প্রশ্নও করতে পারে যে, মেনে নিলাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আল্লাহ পাক
উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
স্বশরীরে উক্ত মীলাদ শরীফ উনার মজলিসে উপস্থিত হওয়ার
কারণে উনার সম্মানার্থে ক্বিয়াম করেছেন। কিন্তু বর্তমান মীলাদ শরীফ উনার সকল মজলিসেই কি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হন? যদি উপস্থিত না হন তবে ক্বিয়াম করা হয় কেন?
এর জবাবে বলতে হয় যে, মূলত মীলাদ শরীফ-এ যে ক্বিয়াম করা হয় তা শুধু সুন্নতই নয় বরং আদব, শরাফত ও তা’যীম বা সম্মানার্থেই করা হয়। অর্থাৎ আখিরী রসূল,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার প্রতি সালাম পেশ করার সময় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে ‘সালাম’ দেয়াই সুন্নত ও আদব। চাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত থাকুন, আর অনুপস্থিত থাকুন।
সর্বাবস্থায় দাঁড়িয়ে সালাম দেয়াই সুন্নত, আদব, শরাফত ও ভদ্রতা।
স্মর্তব্য যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বাবস্থায় তা’যীম বা সম্মান করতে হবে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার এ পৃথিবীতে থাকা অবস্থায় যে ভাবে তা’যীম বা সম্মান করতে হত, উনার বিছাল শরীফ
উনার পরও সমানভাবে তা’যীম বা সম্মান করতে হবে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে যেমন সম্মান করা হত, উনার অনুপস্থিতে ঠিক
তদ্রুপ সম্মান করতে হবে। হযরত ক্বাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুপ্রসিদ্ধ
কিতাব ‘শিফা শরীফ’-এ বর্ণনা করেছেন, “হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ উনার পর উনার ইজ্জত, সম্মান, মর্যাদা ঠিক তেমনভাবে অবশ্যকরণীয় কর্তব্য হবে;
যেমন উনার যমীনে অবস্থানকালে কর্তব্য ছিল এবং তা করতে হবে
উনার ছানা-ছিফত কালে, হাদীছ শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, নাম মুবারক, জীবনী মুবারক আলোচনা কালে এবং উনার পরিবারের অর্থাৎ আহাল ও ইয়ালগণের
আচার-ব্যবহার আলোচনার সময়ে।” (শিফা শরীফ, ২য় খ-, পৃষ্ঠা ৪০)
অতএব, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীম-তাকরীম পৃথিবীতে থাকাকালে যেমন ছিল ঠিক তেমনিভাবে উনার বিছাল শরীফ
উনার পরও থাকবে। এ জন্যে হযরত ক্বাজী আয়ায রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার কিতাবে হযরত আবু ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্যকে উল্লেখ করে লিখেন, “প্রতিটি মু’মিনের জন্যে ওয়াজিব হল যে,
যখনই সে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার ছানা-ছিফত করবে বা তার নিকট বা তার উপস্থিতিতে অথবা
তার উপস্থিতিতে আলোচনা করা হবে, যেন অত্যন্ত বিনয়ী
হয়ে যায় এবং নড়া-চড়া বন্ধ করে ভাবমুগ্ধ অবস্থায় চূড়ান্ত আদব সহকারে এমনভানে
সম্মান যেমন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বশরীরে তার সম্মখে
উপস্থিত হলে করতো এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে যেমন আদব করার নির্দেশ আল্লাহ পাক আমাদেরকে প্রদান করেছেন। ঠিক
তেমনিভাবে আদব প্রদর্শন করতে হবে।” (শিফা শরীফ, ২য় খ-, পৃষ্ঠা ৪০)
বর্ণিত আলোচনা থেকে যে দিক নির্দেশনা পাওয়া
যায়, সে পরিপ্রেক্ষিতে দৃঢ়তার সাথে বলতে হয় যে, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনার সময়ে
অর্থাৎ সালাম পেশ করার সময় অর্থাৎ ছালাম পেশ করার সময় দাঁড়িয়ে যাওয়া ওয়াজিব।
যেহেতু সম্মানীকে উনার সামনে যেমন সম্মান করা হয়, উনার আড়ালেও তেমনভাবে সম্মান করতে হয়। যেমন ইসলামী শরীয়তের বহুল পরিচিত
একটি মাসয়ালাকে এ বিষয়টি সহজভাবে বুঝার জন্যে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা যেতে
পারে।
বাইতুল্লাহ শরীফ উনার সামনে অবস্থানকালে যেমন বাইতুল্লাহ শরীফ উনার দিকে সম্মুখ বা পিঠ দিয়ে ইস্তিঞ্জার জন্য বসা নিষেধ। তেমনিভাবে হাজার
হাজার মাইল দূর দেশ হতেও ইস্তিঞ্জার সময় বাইতুল্লাহ শরীফ উনার দিকে সম্মুখ পিঠ দিয়ে বসা নিষেধ।
যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবু আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে, “যখন তোমরা ইস্তিঞ্জাখানায় যাবে, তখন ক্বিবলার দিকে তোমাদের সম্মুখ বা পিঠ করবেনা বরং পূর্ব বা পশ্চিম দিকে করে
দিও।”হযরত আবু আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু বলেন, আমরা যখন শাম দেশে গেলাম, তখন দেখি সেখানে বাথরুমগুলো ক্বিবলামুখী করে তৈরি করা হয়েছে। আমরা ঘুরে বসে
কাজ সমাধা করতাম এবং আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতাম। হযরত ছুফিয়ান ইবনে উয়ায়নাহ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হ্যাঁ। (মুসলিম, বুখারী, তিরমিযী)
বাইতুল্লাহ শরীফ হল শিয়ারুল্লাহ; যা মুসলমানদের ক্বিবলা। এ জন্যে এ ঘরকে সম্মান করতে হয়। এ ঘরের উপস্থিতিতে
এভাবে সম্মুখ ভাগ বা পিঠ দিয়ে বসে ইস্তিঞ্জা করা যায় না। ঠিক একইভাবে সামনে না
হলেও আল্লাহ পাক উনার ঘর ক্বিবলাকে সম্মান
করতে হয়। হাজার হাজার মাইল দূরেও সম্মুখ বা পিঠ দিয়ে বসে ইস্তিঞ্জা করা জায়িয
নেই। এই মাসয়ালার ভিত্তিতে বলা যায় যে, রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কোন মুসলমানের সামনে স্বশরীরে এসে হাজির হন তখন এমন কোন
মুসলমান কি আছে, যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
সামনে আসতে দেখেও সে তার নিজের আসনে বসে থাকবে, দাঁড়িয়ে তা’যীম বা সম্মান প্রদর্শন করবে না? যদি তখন দাঁড়িয়ে যাওয়া আদব হয় ও জায়িয হয় বরং শরীয়ত অনুযায়ী তখন
দাঁড়ানো ফরযের অন্তর্ভুক্ত। তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার অনুপস্থিতিতেও দাঁড়িয়ে উনাকে তা’যীম বা সম্মান প্রদর্শন করা জায়িয হবে না কেন? বরং দাঁড়িয়ে যাওয়া ফরয-ওয়াজিব। তাই মীলাদ শরীফ-এ উনার বিলাদত শরীফ
উনার কথা শুনে দাঁড়িয়ে যাওয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তা’যীম বা সম্মান প্রদর্শনেরই নামান্তর।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর খলীফা
মাওলানা শামছুল হক্ব ফরীদপুরী তার ‘তাছাওউফ তত্ত্ব’ নামক কিতাবে ৪১ নম্বর
পৃষ্ঠায় লিখেছে, “হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম করার সময় বসে বসে সালাম করা শরীফ তবীয়তের লোকের
কাছে বড়ই বেয়াদবী লাগে। সেজন্য রওযা শরীফ উনার সামনে নিজেকে হাজির ধ্যান করে খাড়া হয়ে সালাম করাতে কোনই দোষ হতে
পারেনা। যেমন মদীনা শরীফ-এ রওযা শরীফ উনার সামনে সালাম করার সময় সকলেই দাঁড়াইয়া সালাম করে থাকেন।”
মাওলানা শামসুল হক ফরীদপুরীর উক্ত বক্তব্য
দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ শরীফ-এ যে ক্বিয়াম
করা হয়, তা মুহব্বত, আদব, শরাফত ও তা’যীমার্থে করা হয়। এখানে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিত হওয়া না হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই।
তাছাড়া ক্বিয়াম বিরোধীরা কি এরূপ একখানা দলীল
পেশ করতে পারবে? যেখানে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে সালাম দেয়ার সময় দাঁড়িয়ে সালাম দেয়া নিষেধ বা নাজায়িয। মূলত
একখানা দলীলও তারা পেশ করতে পারবেনা। যদি তাই হয়ে থাকে তবে ক্বিয়াম করাকে বা
দাঁড়িয়ে সালাম দেয়াকে কি করে নাজায়িয ও বিদয়াত বলা যেতে পারে? বস্তুত মীলাদ শরীফ-এ ক্বিয়াম করা হচ্ছে, খাছ সুন্নত ও আদবের অন্তর্ভুক্ত। এটাকে বিদয়াত, নাজায়িয বলা সুস্পষ্ট কুফরী।
উল্লেখ্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ উনার কিতাব রদ্দুল মুহতার ও
হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ কিতাবে উল্লেখ আছে যে, ক্বিয়াম তিন প্রকার-
(১) ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী: এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার ইরশাদ হয়েছে- “তোমরা আজমীদের মত (মাথা নিচু করে নমস্কারের ছূরতে) দাঁড়ায়োনা।” এরূপ ক্বিয়াম শরীয়তে সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম ।
(২) ক্বিয়ামে হুব্বী: যেমন- হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা- সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ঘরে আসলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মুহব্বতে) দাঁড়িয়ে যেতেন,
এটাকে ক্বিয়ামে হুব্বী বলে।
(৩) ক্বিয়ামে তা’যীমী: যেমন- হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা
ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীমের জন্য দাঁড়াতেন; যা উল্লিখিত হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
মূল কথা হলো- ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী শরীয়তে
নাজায়িয, হারাম ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। আর ক্বিয়ামে
হুব্বী ও ক্বিয়ামে তা’যীমী শরীয়তে জায়িয ও
সুন্নত।
অতএব, কুরআন শরীফ ও
সুন্নাহ শরীফ উনার উপরোক্ত দলীল-প্রমাণের আলোকেই প্রমাণিত হলো
যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ উভয়টিই খাছ সুন্নতের
অন্তর্ভুক্ত। আর সুন্নতের বিরোধিতা করা প্রকাশ্য কুফরীর শামিল।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ
করেন, “বলুন, আল্লাহ পাক ও রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত বা অনুসরণ করো। অতঃপর যদি তোমরা ফিরে যাও (তবে জেনে রেখ)
নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কাফিরদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৩১)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ না করে বরং উনার বিরোধিতা করবে সেটাকে বিদয়াত, কুসংস্কার, হারাম, শিরক ইত্যাদি বলে
অভিহিত করবে তারা মূূলত কাফিরের অন্তর্ভুক্ত। যেমন এ প্রসঙ্গে ছহীহ আবু দাউদ
শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতকে ত্যাগ কর তাহলে অবশ্যই তোমরা কাফির হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ শরীফ)
আর আক্বাঈদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, সুন্নতকে ইহানত বা অবজ্ঞা করা কুফরী।
শরীয়তের মাসয়ালা হলো, কোন মুসলমান কুফরী করলে সে আর মুসলমান থাকে না, মুরতাদ হয়ে যায়। মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে- তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বাতিল হয়ে
যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে
যাবে। তার ওয়ারিছ স্বত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন।
এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড।
সে মারা গেলে তার জানাযা, কাফন, দাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মত গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে
হবে।