নোটিশ

বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ভারতে মুজাফফর নগরে ভয়াবহ মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা


৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফ্ফরনগরে ভয়াবহ মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়েছে। এনডিটিভি খবরে এ পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হলেও এখনও বহু মুসলমান নিখোঁজ রয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কৌশল রাজ শর্মা জানিয়েছে, বহু মানুষ নিখোঁজ থাকায় মৃতের সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না, প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বাড়তে পারে। নিহতদের মধ্যে দু’জন সাংবাদিকও রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৮০০ সেনা তলব করা হয়েছে এবং জারি করা হয়েছে কারফিউ। কংগ্রেস নেতা দিগ¦জিয় সিং বলেছে, রাজ্যের ক্ষমতাসীন সমাজবাদী দল এ দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দাবি করেছে, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মূল শহরের নিকটস্থ গ্রামগুলো থেকে এখনও দাঙ্গার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়, উত্তর প্রদেশ জুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রায় ৮০০ সেনা নিয়োগ করা হয়েছে, বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশী চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।


মুসলিমবিরোধী এ দাঙ্গার ঘটনার সূত্রপাত ঘটে গত শনিবার কাউয়াল নামক গ্রামে কয়েকশ’ হিন্দু কৃষক একত্রিত হয়ে কথিত হিন্দু হত্যাকা-ের বিচার দাবি করতে থাকে। তারা দাবি করে, “গত মাসে একটি হিন্দু মেয়েকে মুসলমান ছেলেরা উত্যক্ত করেছে এবং এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে কয়েকজন হিন্দু নিহত হয়েছে” এমন ঘটনাকে অজুহাত করে তারা হিন্দুদের জড়ো করতে থাকে। প্রদেশটির সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী আজম খান বলেন, উগ্রহিন্দুত্ববাদী কৃষকরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজক শ্লোগান দিতে থাকলে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য গত ১লা সেপ্টেম্বর থেকেই উগ্রহিন্দুরা সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট ফেইসবুকে অপপ্রচারে নামে। তারা ‘ডব ঃযব ঐরহফঁং’ নামে একটি পেইজ থেকে ‘২ যরহফঁং সবৎপরষবংংষু নবধঃবহ ঃড় ফবধঃয’ নামক একটি ভিডিও আপলোড করে দাবি করে, মুসলমানরা এক হিন্দু মেয়েকে উত্ত্যক্ত করায় তার প্রতিবাদে দুই হিন্দু যুবক এগিয়ে আসে। সে সময় প্রায় দেড়শ’ মুসলমান ঐ দুই হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা কর। এই ভিডিওটি কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় ৫ সহ¯্রাধিক আইডি থেকে শেয়ার করে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া হিন্দু উগ্রবাদীরা। পরবর্তীতে জানা যায় ভিডিওটি ঐ ঘটনার নয়, গত ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট পাকিস্তানের শিয়ালকোটের একটি ঘটনা। যা ছড়ানো মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।


এদিকে, ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টি বলেছে, এ দাঙ্গা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক এবং বিজেপি কর্তৃক সংঘটিত। তারা আগামী ২০১৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে হিন্দুদের ভোট পাওয়ার জন্য গুজরাটের পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গোধরার ট্রেনে উদ্দেশ্যমূলক আগুন দিয়ে মুসলমানদের উপর দোষ চাপিয়ে ভয়াবহ মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটানো হয়। ঐ দাঙ্গার মাধ্যমে উগ্রবাদী হিন্দুদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসে উগ্রহিন্দুহিন্দুত্ববাদী বিজেপি। সেই দাঙ্গায় লক্ষ লক্ষ মুসলমান প্রাণ হারায়।

এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিনডে বলেছে, ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার হার মারাত্বক বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর শেষ না হতেই এখন পর্যন্ত ৪৫১টি দাঙ্গার খবর পাওয়া গেছে, যেখানে গত বছরে দাঙ্গার সংখ্যা ছিল ৪১০টি। আসছে নির্বাচনকে সামনে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বৃদ্ধি পাবে এই আশঙ্কায় ভারতের ২৮টি প্রদেশে গোয়েন্দাদের সর্বোচ্চ সতর্কবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।



১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
  ভারতের মুজাফফর নগরে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা অব্যাহত
* মসজিদের ইমাম সাহেবকে গুলি করে হত্যা
* দাঙ্গার নেতৃত্বে উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিজেপির নেতারা
* হিন্দু দাঙ্গাবাজদের সহায়তায় পুলিশ
* মুসলমানদের প্রশ্ন: সেনাবাহিনী কোথায়?

আল ইহসান ডেস্ক:

ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরে দাঙ্গা অব্যাহত আছে। রাজ্যের আরো জেলাতেও দাঙ্গা ছড়িয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, কিন্তু মুসলমানরা বলছে তারা কোন সেনাবাহিনীকে পায়নি।
রাজ্যের এই দাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭ হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি। অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে বহু আহত মুসলমানকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, গত ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযিমী (সোমবার) সন্ধ্যায় রাজ্যের সামলি জেলায় বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেখানে মাওলানা ওমর দীন নামে মসজিদের এক ইমামকে গুলি করে হত্যা করে উগ্র হিন্দুরা। এর পরেই ওই এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া এদিন মুজাফফরনগরেও থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় পত্রিকাগুলোর প্রকাশিত ছবিতে উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিজেপি’র তিন নেতা আশ্বীন, জয়দীপ ও প্রিসিপালকে দাঙ্গার নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। এছাড়া ‘নিরাপত্তাকর্মীরা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করছে’ একথা বলা হলেও পুলিশ সশস্ত্র হিন্দু দাঙ্গবাজদের সাহায্য করছে এমন ছবি স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। এদিকে, স্থানীয় মুসলমানরা জানিয়েছে, বাইরে থেকে প্রচুর হিন্দু সন্ত্রাসীরা আসছে এবং মুসলমানদের শহীদ করছে। এ সময় তারা কোন সেনাবাহিনীকে দেখতে পায়নি।


ভারতে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় মুসলিম নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চলছেঃ

১০ অক্টোবর (রেডিও তেহরান): চোখের সামনে নিজ কিশোরী মেয়ের ওপর প্রতিবেশী হিন্দু দুর্বৃত্তদের পাশবিক অত্যাচারের কথা মনে উঠতেই বুকটা ভারী হয়ে ওঠে ফাতিমার। ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মুজাফফরনগরে গতমাসের কথিত হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় গণধর্ষণের শিকার হয় ফাতিমার ১৭ বছরের মেয়ে। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বলা হলেও ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মূলত মুসলমানরাই।

একটি ত্রাণকেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া ফাতিমা অশ্রু ভারাক্রান্ত চোখে বলেন, “তারা ছিল ছয়জন। তারা আমাকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে চোখের সামনে আমার মেয়ের ওপর একের পর এক চড়াও হয়। আমি তার (সতীত্ব) রক্ষা করতে পারিনি।”

আজও সেই দুঃসহ পাশবিকতার কথা পুলিশকে জানাতে পারেননি ফাতিমা। একদিকে আরো বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা অন্যদিকে লোকলজ্জার ভয় তাকে মামলা করা থেকে বিরত রেখেছে। ফাতিমা এ সম্পর্কে বলেছেন, “আমার মেয়ে গণ-ধর্ষণের শিকার হয়েছে একথা জানতে পারলে কে তাকে বিয়ে করবে বলুন? সমাজ তাকে নষ্টা মেয়ে বলে প্রত্যাখ্যান করবে।”

মুজাফফরনগর দাঙ্গার পর উত্তর প্রদেশের মালাকপুর ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১০,০০০ মুসলমান। তাদেরই একজন ফাতিমা। ৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া তিনদিনব্যাপী দাঙ্গায় যে শুধু মুসলমানদের হত্যা এবং তাদের ঘর-বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে তাই নয়, সেই সঙ্গে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ফাতিমার মেয়ে মতো অসংখ্য মুসলিম নারী। ওই দাঙ্গায় নিহত হয়েছে প্রায় ৫০ জন যাদের বেশিরভাগই মুসলমান।

কিন্তু পুলিশের কাছে ফৌজদারি অপরাধ জমা পড়েছে মাত্র ২৮২টি; এর মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে মাত্র পাঁচটি। কিন্তু বেশিরভাগ আক্রান্ত মানুষ যে বিচার চাইতে পুলিশের দ্বারস্থ হননি তার একটি ছোট উদাহরণ ফাতিমার সাত সদস্যের পরিবার। তারা জানেন, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে আরো অনেক বেশি হেনস্থা হতে হবে, সমাজে মাথা কাটা যাবে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। ১১ বছর আগের গুজরাট দাঙ্গার প্রধান অভিযুক্ত নরেন্দ্রমোদি আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী।

অবশ্য উত্তর প্রদেশের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা কল্পনা সাকসেনা দাবি করেছেন, প্রতিটি অভিযোগই তারা আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত করছেন।

সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে একজন মুসলিম পুরুষের হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে মুজাফফরনগর দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। প্রভাবশালী জাত হিন্দুরা তাদের একজন নারীকে উত্যক্ত করার অভিযোগে ওই মুসলিম পুরুষকে হত্যা করে।